“তরুণ উপদেষ্টা পদত্যাগ করে নতুন দলের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

এ বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক আলোচনা অনুযায়ী, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একজন তরুণ উপদেষ্টা পদত্যাগ করে এই দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন।

দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মতে, নতুন দলটি আদর্শগতভাবে মধ্যপন্থী ধারার হবে, এবং এর নাম ও প্রতীক নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব উঠেছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। দলটির নাম এবং প্রতীক নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সূত্র জানাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন শিক্ষার্থী উপদেষ্টা—মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ—এর মধ্যে একজন শীঘ্রই পদত্যাগ করে নতুন দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন। বাকি দুজন পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে দলটিতে যোগ দিতে পারেন, এবং তাদের একজন আগামী জুন মাসে পদত্যাগ করতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির শেষভাগে দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। তিনি বলেন, “নতুন দলটি ডান-বাম ধারার বাইরে, জাতির স্বার্থের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মধ্যপন্থী রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে।” এই দলের লক্ষ্য হলো, গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে, তবে কোন পার্টির রাজনীতির সাথে যুক্ত না হওয়া ব্যক্তিদের নতুন দলে অন্তর্ভুক্ত করা।

দলের নাম, নেতৃত্ব, আত্মপ্রকাশের নির্দিষ্ট তারিখ বা অনুষ্ঠানস্থল সম্পর্কে আরও আলোচনা চলছে, এবং শীর্ষ নেতৃত্বের বিষয়ে জনমত যাচাইয়ের কাজ চলছে। আখতার হোসেন জানান, “এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি, তবে ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের পর সরকারের ভিতরে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে চলবে, সে বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।”

অভ্যুত্থান এবং রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের বিকাশ

গত বছরের ৫ আগস্ট, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছিল। এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর, গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ৮ নভেম্বর প্রথম কমিটি গঠন করার পর, ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা সারা দেশে ২৫৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি গঠন করেছে, যার মোট সদস্যসংখ্যা ৩৪,০০০ এরও বেশি।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও তাদের সংগঠন সম্প্রসারণ করছে। গত ২ নভেম্বর তাদের প্রথম কমিটি গঠন করার পর থেকে, ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩০টি জেলা, ৫টি মহানগর, ৮টি থানা, ২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি কলেজ এবং একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ প্রায় ৮,০০০ সদস্যের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করেছে।

তবে, ছাত্র আন্দোলন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরেও জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের “সিভিল পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম” হিসেবে চালু থাকবে। একইভাবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।