“কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না, যুদ্ধকালীন সতর্কতার মতো প্রস্তুতি নিতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা”

চলতি বছরটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছেন, কাউকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না। তিনি এও বলেছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে হবে যেন দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সভায় তিনি পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং এজন্য একটি বিশেষ কমান্ড সেন্টার গঠন করতে নির্দেশ দেন।

অধ্যাপক ইউনূস নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের উদ্দেশ্যে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, “যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ কাউকে দেওয়া যাবে না।”

তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে এবং মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। দেশবাসীকে অপপ্রচার সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সবাইকে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। আমাদের অবশ্যই একটি কমান্ড সেন্টার স্থাপন করতে হবে যা পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে।”

তিনি আরও বলেন, এই নতুন কমান্ড কাঠামো ‘দক্ষতা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে’ দেশের বিভিন্ন বাহিনী এবং থানা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে।

অধ্যাপক ইউনূস নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে নির্দেশ দেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যদি আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে আমাদের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হতে হবে।”

এছাড়া, তিনি পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষ করে যাতে পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, মানুষ যাতে সরাসরি থানায় না গিয়ে অনলাইনে মামলা করতে পারেন, সেজন্য একটি অনলাইন ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের একটি নম্বর যেমন ৯৯৯ চালু করা উচিত, যার মাধ্যমে দেশের যেকোনো স্থান থেকে অভিযোগকারী এফআইআর দায়ের করতে পারবেন।

এছাড়া, তিনি পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে অনলাইনে এফআইআর দায়েরের জন্য একটি নতুন ফোন নম্বর চালুর নির্দেশ দেন এবং বিশেষ কল সেন্টার স্থাপনের কথা বলেন, যাতে মামলার সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।

আইজিপি বাহারুল আলম সভায় জানান, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে এই মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেন।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।