গ্যাসের দাম বাড়ানোর নতুন সিদ্ধান্তে দেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে এবং উৎপাদন খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। জুলাই বিপ্লবের আগে এবং পরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ দেশের উপরেও পড়েছে। ব্যাংক খাতের সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ এবং সার্বিক নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার শিল্প খাতে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার পরিকল্পনা করছে। এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বছরে অতিরিক্ত খরচ হবে ১৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি স্থগিত করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই মূল্য নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব : জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল ২৫,৯৪৭ এমএমসিএম, যার ১৮ শতাংশ শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়। পোশাক শিল্পের বার্ষিক গ্যাস চাহিদা প্রায় ১,৪০০ এমএমসিএম। গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটার ৪৫ টাকা বাড়লে, বছরে ৬,৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে, যা রপ্তানি আয়ের প্রায় ১.৫ শতাংশ। একইভাবে, টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে বছরে অতিরিক্ত ১১,৬৭৫ কোটি টাকা খরচ বহন করতে হবে, যা বার্ষিক পোশাক রপ্তানি আয়ের ২.৭ শতাংশ।
বিনিয়োগে স্থবিরতা : বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে পোশাক শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৮.৯৫%, এবং বস্ত্র খাতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৮.১১%। গ্যাসের দাম বাড়ালে বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বর্তমানে শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায়, দেশীয় পোশাক রপ্তানিতে বিকল্প নগদ সহায়তা ৪% থেকে কমিয়ে ১.৫% করা হয়েছে।
শিল্পের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে পোশাক খাতে বিরাজ করছে একটি সংকট। গত ৫ বছরে গ্যাস, বিদ্যুৎ, ডিজেল এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েছে, যার ফলে কারখানার গড় উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৬% বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা শিল্পের জন্য একটি বাড়তি চাপ।
বিশ্বব্যাপী পোশাক রপ্তানির অবস্থাও সংকটজনক। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে পোশাক আমদানি ৫% কমতে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের শিল্পে।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায়, ব্যবসায়ীরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি স্থগিত করে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।