বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে শীত উপেক্ষা করে দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের ব্যাপক আগমন ঘটেছে। ৩ থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনেই বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করেছেন ৭৫০০ দেশি ও বিদেশি পর্যটক।
এছাড়া, সুন্দরবনের অন্যান্য দর্শনীয় স্পটেও পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে বিপুল পর্যটক আগমন সামাল দিতে বন বিভাগকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৯ মাস ধরে চলে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম। তবে শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে। সুন্দরবনের প্রায় ৯০% পর্যটক পূর্ব সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী টাইগার পয়েন্ট, হরিণের বিচরণ ক্ষেত্র, জামতলা, কদমতলা সী-বিচ, হারবাড়িয়া, শরণখোলা, আলিবান্দা, ত্রিকোন আইল্যান্ড, দুবলা, পক্ষীরচর, ডিমের চর এবং করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে থাকেন।
গোটা সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ৮০% পরিদর্শন করেন বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল। গত তিন দিনে এই কেন্দ্রে ৭৫০০ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। মোংলা বন্দর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রে ঝুলন্ত ফুট ব্রিজ, ফুট ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ার, কুমির, হরিণ, বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, ম্যানগ্রেভ আরবোরেটাম ও ডলফিন প্যাভিলিয়ন রয়েছে, যা শীত মৌসুমে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মোংলার রেল সংযোগ এবং পদ্মা সেতুর চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে সড়কপথে সুন্দরবনের দূরত্ব এখন মাত্র ৩ ঘণ্টায় নেমে এসেছে, যার ফলে পর্যটন মৌসুমে আগমন আরও বেড়েছে। দিনব্যাপী ভ্রমণের সুযোগ এবং ২৪ ঘণ্টায় রূপ বদলানো সুন্দরবন দেখতে প্রতিদিনই খুলনা, মোংলা, শরণখোলা থেকে বিলাসবহুল লঞ্চ, ট্যুরিস্ট বোটসহ শত শত জলযানে পর্যটকরা এসে ভ্রমণ করছেন।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় এবং হোটেল-মোটেল বুকিংয়ের বিড়ম্বনা ছাড়াই পর্যটকরা দ্রুত ও কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারছেন। এসব কারণে ট্যুর অপারেটর এবং পর্যটকরা বন বিভাগের কাছ থেকে আগাম অনুমতিপত্র সংগ্রহ করছেন।
তবে, বন বিভাগের জনবল কম থাকায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পর্যটক ও বনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটকদের সহায়তা কামনা করেছেন বন কর্মকর্তা।