কর্মস্থলে নারীরা যেন তাদের শিশু সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন, সেই জন্য আরও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। বার্ষিক প্রচারাভিযানের সময়, জাতিসঙ্ঘ এ বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বুকের দুধ খাওয়ানোর হার বাড়ানো যায়।
জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী, যেসব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না, তাদের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বেশি, তুলনামূলকভাবে যেসব শিশু কেবল বুকের দুধ খায়। জাতিসঙ্ঘ তাই কর্মস্থলে মায়েদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা বলেছে, যেমন বেতনসহ মাতৃকালীন ছুটি, বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য কাজের মাঝে বিরতি এবং কর্মস্থলে আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা।
তবে স্তন্যদান নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যার কারণে অনেক মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে পারেন। এই ভুল ধারণাগুলোর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিথ এবং তাদের সংশোধন তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মিথ ১: বুকের দুধ খাওয়ালে স্তনে ব্যথা এবং স্তনবৃন্তে ঘা হয়
প্রফেসর ক্যাটরিওনা ওয়েইট বলেন, স্তন্যদান শুরুর সময় কিছুটা অস্বস্তি হওয়া স্বাভাবিক। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণ নয়। যদি কারো খুব বেশি ব্যথা হয়, তাহলে এটি ইনফেকশন বা শিশুর সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ার পদ্ধতি না জানার কারণে হতে পারে। এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মিথ ২: প্রথমে স্তন্যদান শুরু না করলে পরে আর করা যায় না
প্রফেসর অ্যালেস্টেয়ার সাটক্লিফ জানান, স্তন্যদান শুরু করার পর থেকে মায়ের শরীরে যে দুধের চাহিদা বাড়ানোর সংকেত পাঠানো হয়, তা শিশুর জন্য উপকারী। তবে, যেকোনো সময় স্তন্যদান শুরু করা যেতে পারে এবং এর অনেক উপকারিতা রয়েছে, যেমন কোলোস্ট্রাম পাওয়ার সুযোগ।
মিথ ৩: বুকের দুধ খাওয়ালে কোন ওষুধ খাওয়া যায় না
প্রফেসর ক্যাটরিওনা ওয়েইট বলেন, অনেক ওষুধই শিশুদের জন্য নিরাপদ। সাধারণত, ব্যথা, সংক্রমণ বা অন্যান্য সাধারণ সমস্যার জন্য যেসব ওষুধ ব্যবহৃত হয়, সেগুলো বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুদের কাছে পৌঁছায় না। তবে কিছু ওষুধ, বিশেষ করে ক্যান্সার বা গুরুতর রোগের জন্য ব্যবহৃত, হতে পারে ক্ষতিকর।
মিথ ৪: মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত
প্রফেসর ক্যাটরিওনা ওয়েইট জানান, স্তন্যদানকালে কোনো খাবার পরিহার করার প্রয়োজন নেই। তবে কিছু খাবার শিশুর আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন টক ফল। মা নিজেই কিছু খাবার খাওয়ার পর সন্তানের আচরণে পরিবর্তন দেখে বুঝতে পারেন।
মিথ ৫: ফর্মুলা দুধ দেওয়ার পর স্তন্যদান করা সম্ভব নয়
প্রফেসর ক্যাটরিওনা ওয়েইট বলেন, স্তন্যদানের জন্য শরীর প্রাকৃতিকভাবে প্রস্তুত থাকে এবং ফর্মুলা দুধ দেওয়ার পরেও মা আবার স্তন্যদান শুরু করতে পারেন। তবে, ফর্মুলা দুধ স্তন্যদানের প্রক্রিয়া সহায়ক নয়।
মিথ ৬: অসুস্থ অবস্থায় বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত নয়
প্রফেসর অ্যালেস্টেয়ার সাটক্লিফ বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মা অসুস্থ থাকলে তাতে স্তন্যদান বন্ধ করার প্রয়োজন হয় না। শুধু যদি মা HIV বা হেপাটাইটিস আক্রান্ত হন, তখন বুকের দুধ খাওয়ানো নিষেধ।
মিথ ৭: এক বছরের বেশি স্তন্যদান করলে শিশুকে দুধ ছাড়ানো কঠিন
প্রফেসর ক্যাটরিওনা ওয়েইট বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, ছয় মাস পর্যন্ত কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত, তবে পরবর্তীতে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং মাতৃকালীন ছুটির দৈর্ঘ্যেও এটি পরিবর্তিত হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি