অগ্রযাত্রার যাত্রীরা

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, আর এগিয়ে যাচ্ছে নারীও। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা বিশ্বে অনেক দেশের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছে। খেলাধুলা, বিজ্ঞান, গবেষণা, আবিষ্কার, রাজনীতি, প্রশাসন, পররাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর শক্তিশালী উপস্থিতি স্পষ্ট। আমরা দেখেছি প্রথম নারী স্পিকার, প্রথম নারী উপাচার্য, প্রথম নারী পর্বতারোহী, বিজিএমইএর প্রথম নারী সভাপতি এবং আরও অনেক প্রথম। তাদের পথ ধরে নারীরা প্রতিনিয়ত ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এবং এই অগ্রযাত্রায় তরুণদের অংশগ্রহণ নতুন উদাহরণ তৈরি করছে।

আইসিসির ২০২৩ সালের বর্ষসেরা নারী উদীয়মান ক্রিকেটারদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের পেসার মারুফা আক্তার। ১৮ বছর বয়সী মারুফা প্রথম আইসিসি ইভেন্টেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের ঢেলাপীর এলাকার মেয়ে। মারুফার বাবা আইমুল্লাহ হক বর্গাচাষি এবং মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। বড় ভাই, মেজো ভাই, বোনদের সঙ্গেই তার বড় পরিবার। একসময় ক্রিকেট খেলতে না দেওয়ার জন্য বাবার কাছ থেকে বকাঝকা শুনতে হলেও, এখন তার অর্জনেই গর্বিত বাবা। মারুফার স্বপ্ন, জাতীয় দলের বোলিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই এই ছিল, আজকের দিনেও সেই স্বপ্নেই বাঁচি। আমি চাই কেউ যেন আমাদের লাল-সবুজের দেশের দিকে আঙুল তুলে কথা না বলতে পারে।”

আরেক কৃতী নারী গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, যিনি ২০২৩ সালে সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তিনি প্লাস্টিক দূষণ এবং এর মানুষের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। সেঁজুতি সাহা, একজন অণুজীববিজ্ঞানী, ২০২৩ সালে এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন এবং তার গবেষণা কাজের জন্য তিনি বাংলাদেশকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

একইভাবে, বুশরা আফরিন, যিনি আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের প্রধান তাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তার কাজের মাধ্যমে বিশ্বের দরিদ্র শহরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখছেন।

ফোর্বসের ‘৩০ আন্ডার ৩০ লোকাল টরন্টো’ তালিকায় জায়গা পাওয়া নবনীতা নাওয়ার এবং পিমুয়াপা মানসিয়ংকুলও তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যত দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নবনীতা এবং পিমুয়াপার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান “এইচডিএএক্স থেরাপিউটিকস” পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখছে।

এছাড়া, জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি, যিনি ২০২৩ সালে বিবিসির প্রকাশিত বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন, তার অগ্নিদুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে জীবনযুদ্ধ জয় করার কাহিনী পৃথিবীকে অনুপ্রাণিত করছে। তিনি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ভয়েস অ্যান্ড ভিউজ’, যা দগ্ধ নারীদের সচেতনতা বাড়াতে এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করছে।

আর ফুটবল তারকা মোসাম্মাৎ সাগরিকা, যিনি সদ্য শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন, তার সংগ্রামী জীবনও এক চমকপ্রদ উদাহরণ। তিনি বলেন, “আমার পরিবারের অভাব-অনটনের মাঝেও আমি ফুটবল খেলতে চেয়েছিলাম, এবং এখন আমার বাবা নিজেও বুঝতে পারছেন, আমার চাওয়া একেবারে সঠিক ছিল।”

এভাবে শহর থেকে গ্রাম, সর্বস্তরে নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত। অদম্য সাহসিকতা, অনুপ্রেরণা এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই অগ্রযাত্রার যাত্রীরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে চলেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।