রংপুরের আকাশে মেঠো আবাবিল

মুসলমানদের হৃদয়ে এক গভীর ভালোবাসায় জড়িত আবাবিল পাখি, যার উল্লেখ পবিত্র কোরআনে রয়েছে। পবিত্র কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আসা ইয়ামেনের রাজা আব্রাহার অভিযানের সময়, এক ঝাঁক আবাবিল পাখি কঙ্কর ফেলে তার আক্রমণ ব্যর্থ করে দেয়। সেই ঐতিহাসিক আবাবিল পাখি সম্প্রতি দেখা গেছে বাংলাদেশে। বিশেষভাবে, রংপুরের আকাশে এই পাখিটির উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন আলোকচিত্রী, কবি ও লেখক রানা মাসুদ। তিনি তিস্তা নদী থেকে এই পাখির ছবি তুলেছেন এবং জানান, “এদের উড্ডয়ন ক্ষমতা অনেক বেশি, এরা এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না, খুবই চঞ্চল প্রকৃতির এবং দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে পারে। দেখতেও অত্যন্ত সুন্দর।”

রংপুরে মেঠো আবাবিল পাখির দেখা মেলে, যা একটি দেশি প্রজাতি। এদের উড়ার ভঙ্গি খুবই আকর্ষণীয়, এবং তারা নানাভাবে পাক খেতে খেতে উড়তে পারে। আবাবিল (Swallow) একটি ছোট্ট পতঙ্গভুক পাখি, যা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৯০ প্রজাতির আবাবিল রয়েছে, এবং বাংলাদেশে চার প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পরিযায়ী, আর একটি দেশি প্রজাতি হলো মেঠো আবাবিল।

মেঠো আবাবিলের ডানা লম্বা এবং সরু, লেজ দ্বিধাবিভক্ত এবং পা দুর্বল। তারা উড়ন্ত পোকা ধরতে অত্যন্ত পারদর্শী। এদের পালক চকচকে নীল বা কালো, সাধারণত নিচের তুলনায় ওপরের দিক গাঢ় রঙের। মেঠো আবাবিল সাধারণত খামারের চালাঘর, দালানের কার্নিশ বা কোনো কাঠামোয় বাসা বাঁধে। তাদের বাসা বাটি আকৃতির হয় এবং একসঙ্গে ছয়টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে।

এই পাখিগুলি ফসলের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করে, যা কৃষকদের জন্য উপকারী। এদের দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১০ থেকে ৬০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। তাদের লেজে সাধারণত ১২টি পালক থাকে। আবাবিল পাখিকে অনেক সময় সুসংবাদ, আনন্দ ও শান্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

অনেকেই বিশ্বাস করেন যে আবাবিল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। যদি এরা নিচুতে উড়ে, তবে ঠান্ডা বায়ু ও বৃষ্টি আসবে, আর যদি উঁচুতে উড়ে, তবে রোদ ও উষ্ণ আবহাওয়া হবে। সমুদ্রের নাবিকদের কাছে এই পাখি দীর্ঘদিন ধরে একটি শুভ প্রতীক হিসেবে পরিচিত, কারণ তারা মনে করেন, আবাবিল দেখা মানে তীরের সন্ধান পাওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।