হাসিনা সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে, যার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে ঋণ পরিশোধের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই শুরু করেছে, ফলে অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমে গেছে এবং নতুন প্রকল্পের অনুমোদনও কমেছে।
এই পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় এবং প্রতিশ্রুতি কিছুটা কমে গেছে, তবে ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড় হওয়ায় কিছুটা গতি এসেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪০৬ কোটি ডলার।
এদিকে, একই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৫৬ কোটি ডলার। ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৪২ কোটি ডলার, যার মধ্যে ৩১ কোটি ডলার ছিল মূল ঋণ পরিশোধ।
এছাড়া, এই ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে মাত্র ২২৯ কোটি ডলার, যেখানে গত বছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৬৯৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ, বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.১১%।
ঋণ পরিশোধের চাপের মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা টাকার অঙ্কে ৮,৯৩৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার বা ৭,০৫৬ কোটি ১২ লাখ টাকা।
এই অবস্থায়, সবচেয়ে বেশি ঋণ ছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), যা ১০৫ কোটি ডলার ছাড় করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক, যা ৮০ কোটি ডলার ছাড় করেছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার ও এডিবির ৬০ কোটি ডলার ছিল বাজেট সহায়তা হিসেবে। এছাড়া, রাশিয়া, জাপান, চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশও ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে।
এদিকে, ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ২২৯ কোটি ডলার, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৯৮ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে, যা ছিল ৯১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
ইআরডি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত অর্থবছরে নির্বাচনের আগে অনেক অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, যার ফলে ঋণ প্রতিশ্রুতি বেশি ছিল। কিন্তু নতুন সরকারের আসার পর প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হচ্ছে, যার কারণে ঋণ চুক্তি কম হচ্ছে। তবে সামনে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে।
এছাড়া, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী মনে করেন, প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি কম হওয়ার কারণে ঋণের অর্থছাড়ও কমেছে, তবে এটি সাময়িক এবং কাজের অগ্রগতি বাড়লে অর্থছাড়ও বাড়বে।