ধর্ষণ মামলা: ৯২% আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা আটকে আছে ল্যাবে

সিলেটে ধর্ষণ মামলার দীর্ঘসূত্রিতা: ডিএনএ প্রতিবেদন ও বিচারিক বিলম্ব

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, যন মেয়েটি নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ধর্ষণের অভিযোগে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালককে গ্রেপ্তার করা হয়, তবে এখন পর্যন্ত অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়নি। পুলিশের দাবি, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার আগে মামলার অগ্রগতি হচ্ছে না, কারণ সিলেটের নমুনাগুলি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিবেদন এখনও আসেনি।

ঢাকার ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির (এএফডিপিএল) তথ্য অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলাগুলোর ৯২ শতাংশে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুত হয়নি। প্রকল্পের অব্যবস্থাপনা, জনবল সংকট এবং পরীক্ষার উপকরণের অভাবের কারণে দীর্ঘ সময় লাগছে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে। বিশেষ করে ধর্ষণ মামলাগুলির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিলম্ব হচ্ছে, এবং বর্তমানে ২০২২ সালের মামলা গুলির প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের ১,৩০৪টি ডিএন পরীক্ষার মধ্যে মাত্র ১০০টি প্রতিবেদন প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে।

মেয়েটির ভাই প্রথম আলোকে বলেন, “আমার বোনের মামলা এখনো এগোয়নি। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে এবং লোকলজ্জার কারণে স্কুলে যেতে চায় না।” অন্য এক নারী, যার ধর্ষণের মামলা চলছে, অভিযোগ করেন যে তাঁর মামলারও কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, পুলিশ জানিয়েছে, যদি কিছু হয়, তবে তাকে জানানো হবে।

দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, তাঁর থানায় এক-দেড় বছরের মধ্যে কোনো ডিএনএ প্রতিবেদন আসেনি। কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে ১০-১২টি ধর্ষণের মামলার ডিএনএ প্রতিবেদন সিলেটে পাঠানো হয়েছে, তবে তার থানায় এসব আসেনি। তিনি জানান, প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি, এবং সিলেটে ডিএনএ প্রতিবেদন ছাড়া অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব নয়।

ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের দেরির কারণে মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় অনেক নারী ক্ষুব্ধ। সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের উদ্যোগে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আসামি শনাক্ত করার জন্য একাধিক ল্যাব স্থাপন করা হলেও, প্রকল্পের জনবল সংকট ও পরীক্ষার পরিমাণের অপ্রতুলতা এই প্রতিবেদন প্রস্তুতিতে বিলম্ব সৃষ্টি করছে। এনএফডিপিএল-এর প্রধান মো. জাবেদুল আলম খন্দকার জানান, “ধর্ষণ মামলায় একাধিক নমুনা থাকে, যেমন ভুক্তভোগীর পোশাক, ঘটনাস্থলের বিভিন্ন বস্তু ইত্যাদি, যার কারণে পরীক্ষায় বেশি সময় লাগে।”

এনএফডিপিএল ২০০৬ থেকে ২০২4 সাল পর্যন্ত মোট ১০,৩১৮টি মামলার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করেছে, যার মধ্যে ৬,৭২০টি ধর্ষণ মামলা ছিল। ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আরও ২,০০০টির বেশি ধর্ষণ মামলার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। তবে ২০২২ সালের প্রতিবেদনগুলোও এনও সম্পন্ন হয়নি।

এছাড়াও, ২০২০ সালে সরকার ধর্ষণ মামলার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য ‘ডিএনএ আইন, ২০১৪’ পাস করে এবং ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু, প্রকল্পের মেয়াদ অস্বচ্ছ এবং জনবল সংকটের কারণে কার্যক্রম ধীরগতির।

আইনি বিশেষজ্ঞ সিফাত-ই-নূর খান বলেন, “ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে ধর্ষণের মামলাগুলো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তবে, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে মামলা চালানো যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আরও অধিক সংখ্যক মানসম্মত ল্যাব স্থাপন এবং আধুনিকীকরণ করা প্রয়োজন।'”

এদিকে, এনএফডিপিএল এর প্রধান আশা প্রকাশ করেছেন যে, আগামী দেড় বছরের মধ্যে জমে থাকা ধর্ষণের মামলাগুলোর প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।