ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানে যে পরিবর্তনগুলো চেয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশই সরকার গঠিত কমিশনের সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে সব কিছু রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে দলগুলোর মূল প্রস্তাব অপরিবর্তিত রেখে, তার সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত করে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে আরো সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ক্ষমতার ভারসাম্য আনার সুপারিশগুলোর প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া থাকলেও, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলো এখনো কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বিএনপির সংবিধান সংস্কার বিষয়ক কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যেটুকু দেখছি, তাতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং ক্ষমতার ভারসাম্য আনা—এ ধরনের কিছু বিষয় আমাদের প্রস্তাব থেকে এসেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিষয়ে তো আদালত আগে থেকেই রায় দিয়েছে, কমিশনও সেটি প্রস্তাব করেছে।’ তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবের বিস্তারিত পেলে, দলের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মন্তব্য করেছেন, এটি চূড়ান্ত কিছু নয়; কমিশনের প্রস্তাব হিসেবে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করলে, তখন সংবিধানের মূল সংস্কার বিষয়গুলো নিয়ে তাঁদের মতামত জানানো হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন গত বুধবার প্রস্তাব জমা দিয়েছে এবং কমিশনের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশিত হয়েছে।
বিএনপি তাদের ৬২টি প্রস্তাবে সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছিল, যা কমিশন প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করেছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার বিধান, উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি, সংসদে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তবে জামায়াত তাদের ১০ দফা প্রস্তাবে কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল, যেমন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা। যদিও কমিশন নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়া, সংসদ সদস্যদের বয়স কমিয়ে ২৫ থেকে ২১ বছর করার সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে কিছু রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকরী স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের জন্য একটি ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দলীয় নেতা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠন হবে।
এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা বাকি, যা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।