২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও করপোরেট কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী হিসেবে অভিহিত করেছে, কারণ সরকার কোনো আলোচনা ছাড়াই ভ্যাট বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।
আজ শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ এই মন্তব্য করেন। এ সময় ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তাসকীন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, বর্তমানে দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের দাম বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার কারণে বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অবস্থায় ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক গতিকে আরও ধীর করে দেবে এবং সাধারণ জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপের সাথে আমরা একমত নই। বেসরকারি খাতে একসঙ্গে এতগুলো জায়গায় ভ্যাট বৃদ্ধির ই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।” তিনি জানান, ডিসিসিআই এই বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে।
তাসকীন আহমেদ বলেন, সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা না থাকার কারণে ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে তিনি গত সপ্তাহে মোটরসাইকেল এবং ইলেকট্রনিকস খাতের কিছু পণ্যে আয়কর বাড়ানোর সি্ধান্ত তুলে ধরেন। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী তিন মাসে মোটরসাইকেলের দাম ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
সরকারকে ভ্যাট বৃদ্ধি না করে অন্যান্য উপায় খুঁজে দেখতে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “যদি সরকারি ব্যয় ২০ শতাংশ কমানো যায়, তবে এক বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো সাশ্রয় করা সম্ভব। তাই সরকারি ব্যয় কমিয়ে কর-ভ্যাট বাড়ানোর পথ থেকে বিরত থাকা উচিত।”
তিনি আরও মন্তব্য করেন, দেশে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর গতিপথ আলাদা থাকা উচিত। বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়ের পরিবেশকে আরও কঠিন করে তুলছে। তবে তিনি আশাবাদী যে, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক আলোচনার প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়বে না। তিনি বলেন, “রাজনীতি যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত না করে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তাসকীন আহেদ বলেন, “গুটিকয়েক ব্যবসায়ী রাজনীতিতে যুক্ত হলেও সেটি সবার জন্য নয়। ব্যবসায়ীদের শুধুমাত্র ব্যবসায় মনোযোগী হওয়া উচিত এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আলাদা রাখার আহ্বান জানান।”
ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান অস্থিরতা একটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমস্যা, যার কারণে দুই দেশের ব্যবসায় কিছু প্রভাব পড়েছে। দ্রুত ভিসা জটিলতা এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক সমস্যা সমাধান হলে তা দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির জন্য সহায়ক হবে।”