প্রাথমিকের এক কোটি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র ১৫ দিন বাকি, অথচ শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেয়ার সময় এখনও আসেনি। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য সরকার প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপানোর পরিকল্পনা করেছে। তবে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের মাত্র ১ কোটির কিছু বেশি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এদিকে, মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের পাণ্ডুলিপি পর্যন্ত এখনও ছাপাখানায় পাঠানো হয়নি। আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপানোর কথা।

গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মোট বইয়ের ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার কথা থাকলেও, এ বছর তা সম্ভব হয়নি। আগের বছরগুলোতে এই সময়ে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়ে যেত।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ছাপাখানা মালিকরা ইচ্ছা করে বই ছাপাতে বিলম্ব করছেন, কারণ তারা নোট-গাইড বই ছাপিয়ে ব্যবসা করতে চান। এতে তারা এনসিটিবির সাথে চুক্তি সম্পাদনে সময় নষ্ট করছেন এবং অযথা কাগজ সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছেন।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, “ছাপাখানা মালিকরা নানা অজুহাতে বিলম্ব করছেন। বাজারে কাগজের অভাব নেই, তবুও তারা কাগজ সংকটের কথা বলছেন এবং নোট-গাইড বই ছাপানোর চেষ্টা করছেন।”

মুদ্রণ শিল্প সমিতির সহ-সভাপতি জুনায়েদ আল মাহফুজ জানিয়েছেন, “কাগজের বাজারে নির্দিষ্ট মাপের কাগজের দাম বেশি এবং মিলগুলোও সেই কাগজ তৈরি করছে না। তাই ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়ছেন।”

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির প্রায় ১ কোটি বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের ছাপা এখনও শুরু হয়নি। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরের মোট ৯ কোটি ৩৮ লাখ বই ছাপানো হবে, এবং মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৩১ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এনসিটিবির দুটি ছাপাখানা মালিক জানিয়ে দিয়েছেন, ১ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের বই প্রায় শতভাগ ছাপা শেষ হতে পারে, তবে তাদের মতে, দেরির কারণ এনসিটিবির কাছ থেকে সময়মত চুক্তি ও কার্যাদেশ না পাওয়া।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান আরও জানান, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কম দর দিয়ে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করে, এতে বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আগামীতে সেনাবাহিনীর মেশিনটুলস প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করানো হবে।”

এদিকে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪০ কোটি বই ছাপানোর কাজ চলছে, যার মধ্যে প্রাথমিক স্তরের জন্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ বই এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৩০ কোটি ৯৬ লাখ বই ছাপানো হবে।

বিশেষত, নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে পুরনো শিক্ষাক্রমের বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত, পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন এবং প্রশাসনিক পরিবর্তনের কারণে বই ছাপানোর কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।