শ্রম আদালতে শ্রমিকেরা অবহেলিত, নিষ্পত্তির জন্য ২০ হাজার মামলা অপেক্ষমাণ

শ্রম আদালতগুলোর মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বার্থ পুরোপুরি সংরক্ষিত হচ্ছে না, এবং এর প্রধান কারণ হচ্ছে মামলার নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা। কিছু আদালতে মামলার সংখ্যা কয়েক হাজার, এমনকি ছয় হাজারেরও বেশি। এসব আদালতের বিচারকেরা মামলার নিষ্পত্তি করতে চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্যদিকে, ১৪টি শ্রম আদালতের মধ্যে চারটি আদালতে ১০০টিরও কম মামলা রয়েছে, এবং দুটি আদালতে মামলার সংখ্যা ২০০-এর নিচে। বাকি আটটি আদালতে মামলার সংখ্যা এক হাজারের ওপরে।

শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার জন্য শ্রম আদালত গঠন করা হয়েছিল, এবং সরকার সারা দেশে ১৪টি শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে এই আদালতগুলোর অধীনে মোট ২০ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন বা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মামলার সঠিক নিষ্পত্তি না হওয়ায় শ্রমিকদের স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষা করা যাচ্ছে না। শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানও এ কথা স্বীকার করেছেন এবং শ্রম আদালত পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

নতুন উদ্যোগের বিষয়ে তিনি জানান, কুমিল্লার শ্রম আদালত নারায়ণগঞ্জের মামলায় সহযোগিতা করতে পারে, এবং খুলনা ও বরিশালের আদালতের বিচারকরা সপ্তাহে দু’দিন নিজেদের আদালতে থাকার পাশাপাশি অন্য আদালতেও সহযোগিতা করতে পারেন।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ১,০৪৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, এবং ঢাকায় তিনটি আদালতে মোট ৮,৫১৫টি মামলা রয়েছে। গাজীপুরের শ্রম আদালতে সবচেয়ে বেশি ৬,৭৭৭টি মামলা রয়েছে, আর সিলেটের আদালতে সবচেয়ে কম ৫৬টি মামলা রয়েছে।

কিছু আদালতে মামলার শুনানি একটার পর আর হয় না, কারণ শ্রমিকদের আদালতে আসতে তাদের কারখানার কাজ বন্ধ রাখতে বা ছুটি নিতে হয়, যা অনেক সময় শিথিল হয়ে পড়ে। এর ফলে, শ্রমিকরা মামলা চালানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি এস এম ফারুক তার এক প্রবন্ধে সাতটি কারণ চিহ্নিত করেছেন, যার ফলে শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তি বিলম্বিত হচ্ছে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে শ্রম আইনটির জটিলতা, আদালতের বিচারকদের বদলি, এবং সময়মতো পক্ষগুলোর উপস্থিতি না হওয়া।

এছাড়া, কেয়া কসমেটিকসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে রায় পেয়ে কিছু শ্রমিক ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার সমস্যায় পড়েছেন। তারা জানান, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে তাদের রায় কার্যকর হচ্ছে না।

মামলার প্রধান কারণ হচ্ছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুতি, এবং ন্যায্য পাওনা আদায়। অনেক শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, শুনানির তারিখে দেরি, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ, এবং আদালত কর্মচারীদের অসহযোগিতার কারণে তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আইনজীবী ও শ্রমিক নেতারা বলেন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে অনেকেই হাইকোর্টে রিট করেন, যা শ্রমিকদের জন্য আরও দীর্ঘসূত্রতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, প্রধান সমস্যা হচ্ছে মামলার ধীরগতির কার্যক্রম, যা অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তিনি বলেন, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং রায়ের কার্যকরিতার জন্য সরকারকে সমানভাবে মনোযোগী হতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।