সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা এবং আইএসের পুনরুত্থান: এক কুর্দি কমান্ডারের পর্যালোচনা
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে, যা ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর পুনরুত্থানকে উত্সাহিত করেছে বলে মনে করছেন এক কুর্দি কমান্ডার। এই কমান্ডার, যিনি ২০১৯ সালে সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, জানান যে, আইএসের ফেরা শুরু হয়ে গেছে এবং তাদের কার্যক্রম এখন অনেক বেড়ে গেছে।
সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর জেনারেল মাজলুম আবদি বলেন, “আইএসের কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং তাদের পুনরুত্থানের ঝুঁকি অনেকটা দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে তারা আগের চেয়ে বেশি সক্ষম এবং তাদের সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
এসডিএফ, যা মূলত কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়ে আসছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ফেলে যাওয়া কিছু অস্ত্র এবং গোলাবারুদ আইএস সদস্যদের হাতে চলে গেছে, যা তাদের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করেছে।
জেনারেল মাজলুম আবদি আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এসডিএফ পরিচালিত কারাগারগুলোতে আইএস যোদ্ধারা হামলা চালাতে পারে। এসব কারাগারে প্রায় ১০,০০০ আইএস সদস্য বন্দী রয়েছেন, এবং এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত শিবিরে তাদের পরিবারের আরও ৫০,০০০ সদস্য আছেন।
তিনি জানান, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এসডিএফকে প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তাদের ১২,০০০ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, তাদের আবার আইএসের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা যে জায়গায় ছিলাম, সেখান থেকে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে, যা হতাশাজনক।”
জেনারেল মাজলুম দাবি করেন, প্রতিবেশী তুরস্ক এবং তাদের সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলার কারণে এসডিএফ তাদের বাহিনীকে আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান থেকে অন্যদিকে মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই হামলাগুলোর কারণে তাদের নিরাপত্তার দৃষ্টি ভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে, বিশেষ করে কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
তুরস্কের দৃষ্টিতে, এসডিএফ মূলত কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পিকেকের বর্ধিত সংস্করণ, যা তুরস্কের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ করছে। তুরস্ক এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, এবং সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে একটি ‘বাফার জোন’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
এসডিএফের প্রধান শত্রু হিসেবে তুরস্ককে চিহ্নিত করে জেনারেল মাজলুম বলেন, “তুরস্কের বিমান হামলায় আমাদের সেনারা নিহত হচ্ছেন, যা আমাদের কারাগারের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে। এই হামলাগুলোর অবসান হওয়া প্রয়োজন।”
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আইএস যোদ্ধাদের জন্য আটক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারাগার আল-সিনা। এখানে প্রায় ৫,০০০ বন্দী রয়েছেন, যারা সন্দেহভাজন আইএস সদস্য বা সমর্থক। কারাগারের ভিতর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে বন্দীদের একটি অংশের মুখও ঢেকে রাখা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু বন্দী নিজেদের পরিচয় গোপন রাখলেও, এক ২৮ বছর বয়সী যুবক, যিনি সিরিয়ার রাক্কা শহরের দখলকালে আইএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, দাবি করেন যে তিনি কোনও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, একদিন তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে পারবেন, যদিও নিজের দেশে ফিরে তার কি অবস্থান হবে তা তিনি নিশ্চিত নন।
এই পরিস্থিতি সিরিয়ার জন্য বিপজ্জনক এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে আইএসের পুনরুত্থান এবং তুরস্কের হামলার মতো বিপদ এসডিএফকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।