ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত, কারণ এটি সবসময় স্পষ্ট লক্ষণ সৃষ্টি করে না, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে কিছু লক্ষণ নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিসের উপস্থিতি নির্দেশ করে, যা প্রায়ই অবহেলিত বা ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়। এগুলো চিনতে পারলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব। জেনে নিন, ডায়াবেটিসের এমন ৪টি লক্ষণ যা কেবল নারীদের মধ্যে দেখা যায়:
১. তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া এবং ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো অতিরিক্ত তৃষ্ণা, যা পলিডিপসিয়া নামে পরিচিত। এই লক্ষণটি কেবল নারীদের জন্য নয়, তবে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গর্ভাবস্থা বা মাসিকের সময় নারীদের মধ্যে এটি আরও তীব্র হতে পারে। রক্তে উচ্চ শর্করার কারণে কিডনিকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ ফিল্টার করতে হয়, যার ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। ডায়াবেটিস কেয়ার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে নারীরা মূত্রাশয় অস্বস্তি ও হাইড্রেশন সংক্রান্ত সমস্যায় পুরুষদের তুলনায় বেশি ভুগে থাকে।
২. পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) এবং ইনসুলিন রেজিট্যান্স
PCOS-এ আক্রান্ত নারীদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এটি শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে ইনসুলিন রেজিট্যান্স তৈরি হয় এবং ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়ে। PCOS-এর লক্ষণ যেমন অনিয়মিত মাসিক, ওজন বৃদ্ধি এবং ব্রণ, ডায়াবেটিসের কারণে আরও খারাপ হতে পারে। জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম অনুসারে, PCOS-এ আক্রান্ত ৭০% নারীর ইনসুলিন রেজিট্যান্স থাকতে পারে, যা প্রিডায়াবেটিস বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. বারবার মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই)
ঘন ঘন ইউটিআই নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের একটি উপেক্ষিত লক্ষণ হতে পারে। রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে, যা সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নারীদের ছোট মূত্রনালীও ইউটিআই-এর জন্য আরও প্রবণতা সৃষ্টি করে। জার্নাল অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড ইটস কমপ্লিকেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ইউটিআই হওয়ার ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।
৪. ভারী বা অনিয়মিত মাসিক
ডায়াবেটিস নারীদের মাসিক চক্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে মাসিক ভারী বা অনিয়মিত হতে পারে। ডায়াবেটিস শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা প্রভাবিত করে, যা প্রজনন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমেরিকান জার্নাল অফ অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজির গবেষণা অনুসারে, রক্তে শর্করার অসামঞ্জস্য নারীর মাসিক অনিয়মিত করতে পারে, যা ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধের সংকেত হতে পারে, বিশেষ করে যদি এতে ক্লান্তি বা ওজনের পরিবর্তন ঘটে।
এগুলো যদি আপনার মধ্যে লক্ষ্য করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।