বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের মহান বিজয় দিবস আজ

মহান বিজয় দিবস আজ, ১৬ ডিসেম্বর, বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় আত্মগৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে এদিন অর্জিত বিজয় আমাদের গৌরবের চিহ্ন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি।

এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে হানাদারমুক্ত, স্বাধীন এবং সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, এবং কোটি কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও সংগ্রামে জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পায়।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শাসন থেকে ভারত স্বাধীন হলেও দ্বিজাতির তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে বাঙালি জাতি শোষিত হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাঙালির ওপর বৈষম্য, অত্যাচার, নিপীড়ন শুরু হয়।

পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি সোচ্চার হয়ে ওঠে, এবং আন্দোলন গড়ে তোলে। ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের অবস্থান থেকে এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। বিশেষ করে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদের আত্মত্যাগ জাতিকে মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণা দেয়।

এই আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি এই সংগ্রামকে স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপান্তরিত করেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর নির্যাতন শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় এবং শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।

যুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাজাকার, আল বদর ও আল সামস বাহিনী তাদের সহযোগী হয়ে এসব অপরাধে অংশ নেয়।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারত, যারা লাখ লাখ বাঙালিকে আশ্রয় দেয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন জানায়, যার ফলে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় মেনে নেয়। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এইদিনে বীর বাঙালি বিজয় অর্জন করে এবং হানাদারমুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পথচলা শুরু হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।