অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী ২০২৫ সালের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত সংস্কারগুলি যুক্ত করা হয়, তাহলে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য অন্তত আরও ছয় মাস সময় প্রয়োজন হতে পারে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ১৬ ডিসেম্বর সোমবার সকাল ১০টায় বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড একযোগে তাঁর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে। এটি ছিল তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার পর তৃতীয় ভাষণ।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা এমন একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে চাই, যাতে স্থানীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশ ভোটদান নিশ্চিত করবে। এটি নিশ্চিত হলে ভবিষ্যতে কোনও সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সাহস পাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তা বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশনই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন কমিশন নিয়ে আমি আলাদা কথা বলতে চাই, কারণ এই দুটি কমিশনের সুপারিশের ওপর নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তারিখ।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, “বড় খবর হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এখন তাদের হাতে ভবিষ্যৎ সরকার গঠন প্রক্রিয়া শুরু করার দায়িত্ব রয়েছে।”
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, “প্রথম কাজ হবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, যা খুবই কঠিন কাজ। গত তিনটি নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না, ফলে এখন এই তালিকা যাচাই করা আরও কঠিন হবে। বিশেষ করে যারা গত ১৫ বছরে ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছেন, তাদের নাম নিশ্চিতভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই নির্বাচনে অনেক তরুণ তরুণী প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন, যা একটি স্মরণীয় ঘটনা হবে। তাদের ভোটদানকে মসৃণ ও স্মরণীয় করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।”
ড. ইউনূস ভোটার তালিকা সঠিকভাবে প্রস্তুত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “এছাড়া ভুয়া ভোটারদের তালিকা থেকে বের করে দেওয়া উচিত।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে বহুবার এই আশ্বাস দেওয়া হলেও, এবারের নির্বাচনে এটি বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।”
তিনি শেষ করে বলেন, “সবকিছুই সময়সাপেক্ষ। নির্বাচনের প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাইলে, নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ সময় দিতে হবে।”
প্রধান রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে ড. ইউনূস বলেন, “আমি সব সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আপনাদের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছি। তবে যদি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষে নির্বাচন হতে পারে, কিন্তু নির্বাচনী সংস্কার সম্পূর্ণ করতে অন্তত আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে।”