শীতে শিশুর জ্বর বা সর্দি-কাশি সাধারণ সমস্যা। জ্বর হলে প্যারাসিটামল সিরাপ, নাক দিয়ে পানি পড়লে হিস্টাসিন বা অ্যালাট্রল, এবং কাশির জন্য সালবিউটামল সিরাপ বয়স অনুযায়ী দিলে শিশু দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে অনেক সময় এসবের প্রয়োজন হয় না। লবণ পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার এবং বুকের দুধ ও পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়ালেও শিশু ভালো হয়ে যায়। বাসক পাতার রস এবং মধুও উপকারি। শীতে যে ধরনের সর্দি-কাশি হয়, তা বেশিরভাগ সময় ভাইরাসজনিত, তাই এতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময়:
ঘরোয়া চিকিৎসায় বেশিরভাগ সর্দি-জ্বর ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, যেমন:
- শিশু দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে (নবজাতকের জন্য ৬০ বারের বেশি, ১ বছর পর্যন্ত ৫০, এরপর ৪০ বারের বেশি শ্বাস নিলে);
- বুক নিচে দিকে দেবে গেলে;
- টানা কয়েক দিন বেশি জ্বর থাকলে;
- শিশুটি খুব দুর্বল হয়ে পড়লে;
- যদি শিশুটি খুব বেশি কান্নাকাটি করে।
বিপদ চিহ্ন:
- শিশু অচেতন হয়ে গেলে;
- খিঁচুনি হলে;
- কিছু খাওয়াতে না পারলে বা খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে বমি করে ফেললে, তখন দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
পরামর্শ:
শিশুর শ্বাসনালি অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই শীতে হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে, বাসায় শোবার ঘরে কার্পেট এবং লোমযুক্ত চাদর বা কম্বল ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। হাঁপানি নিরাময়ে সালবিউটামল সিরাপ এক বছরের নিচে শিশুদের জন্য আধা চামচ এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছরের জন্য এক চামচ, দিনে তিনবার খাওয়াতে পারেন।
শিশুর ত্বক এবং শ্বাসতন্ত্র নাজুক ও অপরিণত, তাই তারা সহজে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এই সময় শিশুকে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় পরানো জরুরি, তবে নাক-মুখ বন্ধ করে শক্ত করে মুড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। শীতের কাপড় আরামদায়ক হওয়া উচিত। শীতে ঘাম কম হওয়ায় শিশুর প্রস্রাব বেশি হয়, তাই নবজাতকের কাঁথা বা শিশুর প্যান্ট ভিজে যাচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই অতিরিক্ত প্রস্রাব দেখে শিশুকে বুকের দুধ বা তরল খাবার কমিয়ে দেন, যা ভুল। এটি কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
শিশুর কোমল ত্বকের জন্য ভালো মানের লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, শুধু মুখ নয়, সারা শরীরে। শিশুকে পর্যাপ্ত সময় রোদে রাখতে হবে এবং গোসল করাতে বাধা নেই। কুসুম গরম পানি দিয়ে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে পারেন। তবে গোসলের সময় কানে যাতে পানি না ঢোকে, তা খেয়াল রাখতে হবে। শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শীতেও শিশুর নানা রোগ হতে পারে, তাই দুশ্চিন্তার কারণ নেই।