ডেঙ্গু হওয়ার কারণ এবং তার হাত থেকে বাঁচার উপায়

সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেক আক্রান্ত ব্যক্তি শক সিনড্রোমে (সিভিয়ার) চলে যাচ্ছে এবং কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এই আর্টিকেলে ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


যে কোন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্টে তৈরি করুন আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য
কর্পােরেট ওয়েবসাইট
ই-কমার্স ওয়েবসাইট অথবা নিউজপোর্টাল  ওয়েবসাইট।

ডেঙ্গু কী?

ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মশা একটি আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে মশা আবার অন্য ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই মশাও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহন করতে শুরু করে।

এডিস মশা এবং ডেঙ্গু জ্বরের ধরণে পরিবর্তন

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ, গায়ে র‍্যাশ, মাথা ব্যথা, শরীরব্যথা, এবং চোখে ব্যথা দেখা যায়। তবে এবছরের ডেঙ্গুর লক্ষণ পূর্বের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন এবং আরও তীব্র। চিকিৎসকদের মতে, এবছর ডেঙ্গুতে মাথা ব্যথা, তীব্র জ্বর, গায়ে র‍্যাশ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এডিস মশা রাতের বেলা বা বিশেষভাবে ভোরবেলা কামড়াতে পারে এবং আগের মতো স্বচ্ছ পানিতে ডিম না দিয়ে, ময়লা ও নোনা পানিতেও ডিম পাড়ছে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ

ডেঙ্গু জ্বর দুটি ধরণের হয়ে থাকে: ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু এবং হেমোরেজিক ডেঙ্গু। প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে সাধারণত কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা যায় না। এটি সাধারণত ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হয়ে থাকে। তবে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হলে সমস্যা আরও গুরুতর হতে পারে।

ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  • ১০৪°F (৪০°C) তাপমাত্রায় তীব্র জ্বর
  • মাথা এবং চোখে ব্যথা
  • শরীরে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা
  • বমি, মাথাঘোরা এবং শরীরে ফুসকুড়ি

গুরুতর লক্ষণগুলি:

  • প্রচণ্ড পেট ব্যথা
  • অবিরাম বমি
  • রক্তপাত (মুখ, নাক, প্রস্রাব বা মলের সাথে)
  • ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ
  • দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস এবং ক্লান্তি

এই লক্ষণগুলো দেখে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা ও সাবধানতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এর জন্য মশাবাহিত পরিবেশ ধ্বংস করতে হবে। কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হলো:

  • বর্ষার মৌসুমে মশার বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন মশারি বা মশা নিরোধক ব্যবহার করা।
  • বাইরে বের হলে লম্বা হাতা, লম্বা প্যান্ট এবং মুজা পরা উচিত।
  • মশা বংশবৃদ্ধির সম্ভাব্য স্থানগুলো পরিষ্কার রাখা এবং পানি জমতে না দেওয়া।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে, মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করে পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা।

ডেঙ্গুতে প্ল্যাটলেটের সংখ্যা

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্ল্যাটলেটের সংখ্যা কমে যেতে পারে। সাধারণত একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির প্ল্যাটলেট সংখ্যা থাকে ১.৫ লাখ থেকে ৪.৫ লাখ প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে এটি ২০ হাজারের নিচে চলে যেতে পারে, যা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ভিটামিন সি (যেমন সাইট্রাস ফল, বেরি), আয়রন (মাংস, মটরশুঁটি), জিঙ্ক (সামুদ্রিক খাবার, বাদাম), ওটমিল, পেঁপে, ডাবের পানি, ভিটামিন ই, কেডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। এসব খাদ্য রোগীর শরীরকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও রোগীকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পানি পান করা উচিত।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা এবং সাবধানতা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবার এবং সমাজকে এই ভয়াবহ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।