যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ২০ জানুয়ারি শপথ নেয়ার পর তিনি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস সতর্ক করে বলেছে, নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ এক বিবৃতিতে জানান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা উভয়ের জন্যই উপকারী। তিনি বলেন, “কেউই বাণিজ্যযুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না।” লিউ আরও দাবি করেন, চীন মাদক চোরাচালান বন্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে অবহিত করেছে। তিনি ফেন্টানিলের কাঁচামাল যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাহিত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, সোমবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ২০ জানুয়ারি শপথ নেয়ার পর মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। পাশাপাশি, চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন, যতক্ষণ না চীন আফিম থেকে তৈরি ফেন্টানিলের পাচার বন্ধ করবে।
ফেন্টানিল একটি শক্তিশালী ব্যথানাশক ড্রাগ, যা মরফিন ও হেরোইনের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এর অতিরিক্ত ব্যবহার অত্যন্ত বিপজ্জনক, এবং গত বছর মার্কিন প্রশাসন ধারণা করেছে যে, ফেন্টানিলের অতিরিক্ত ব্যবহার বা ওভারডোজে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। এই সমস্যা সমাধানে বাইডেন প্রশাসন চীনকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল।
লিউ পেংইউ দাবি করেছেন, চীন মাদক চোরাচালান দমন করতে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এটি গত বছর প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে একটি চুক্তির ফলস্বরূপ সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, “চীন ইচ্ছাকৃতভাবে ফেন্টানিলের উপাদান যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাহিত হতে দিচ্ছে—এমন ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
এদিকে, ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন, প্রয়োজনে মেক্সিকো ও চীনের ওপর শতভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন এবং চীনের ‘মোস্ট-ফেভারড নেশন’ সুবিধা সরিয়ে নেবেন।
এ ব্যাপারে অনেক অর্থনীতিবিদ সতর্ক করেছেন যে, শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। শুল্ক মূলত আমদানিকারকদের দিতে হয়, যার ফলে পণ্যের দাম বাড়বে।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আমদানিকারকদের আরও সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি করতে এবং বিদেশে স্থানান্তরিত উৎপাদন কর্মসংস্থানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দেওয়া যাবে।
ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের মডেল অনুযায়ী, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের আমদানি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাবে, এবং চীনে মার্কিন পণ্যের আমদানি প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে। এর মানে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে।
যদি চীন বা অন্য কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ না করেও যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে। পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে মার্কিন রপ্তানি ৬০ শতাংশ কমে যাবে। এই পরিস্থিতিতে, আমদানি ও রপ্তানি একসঙ্গে কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি অপরিবর্তিত থাকবে।