করিশ্মা ঠাকুর, হিমাচল প্রদেশের কোঠি গইরি গ্রামের বাসিন্দা। পাঁচ ভাইবোন এবং মায়ের সঙ্গে তার সংসার। তিনি পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। ২০১৭ সালে তার বাবা ললিত শর্মার মৃত্যু হওয়ার পর, তাদের জীবনে আর্থিক সংকট শুরু হয়।
কিন্তু, দেশজুড়ে এমন উদাহরণ রয়েছে যেখানে অর্থকষ্ট থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছা এবং দৃঢ় মনোবল দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়। করিশ্মার গল্পও তেমনই এক অনুপ্রেরণা। আজ তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট, এবং ডিসেম্বর মাসেই ওই পদে যোগ দিতে যাচ্ছেন।
বাবার মৃত্যু পরপরই শর্মা পরিবারে আর্থিক সংকট নেমে আসে। পাঁচ সন্তানকে প্রতিপালনের দায়িত্ব এককভাবে নেন করিশ্মার মা, দ্রুমতী দেবী। সংসার এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য তিনি গরুর দুধ বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন, পাশাপাশি মনরেগা প্রকল্পে কাজও শুরু করেন। মায়ের সঙ্গে ব্যবসা এবং পড়াশোনার সহায়তায় করিশ্মা ও তার ভাইবোনেরা সংসারের বোঝা ভাগ করে নেন।
করিশ্মা বলেন, “আমার মা দিনরাত খেটে আমাদের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। শৈশব থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেব, কিন্তু বাবার আকস্মিক মৃত্যু সব কিছু ওলটপালট করে দেয়। তবে আমি আমার স্বপ্ন হারাতে দিইনি।”
স্কুলের পর তিনি মান্ডির বল্লভ সরকারি কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক হন। করিশ্মার মধ্যে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার দৃঢ় বাসনা ছিল, তাই তিনি কলেজে এনসিসি-তে অংশ নেন এবং সেখানে সফলতা অর্জন করেন। এই সাফল্য সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পথ খুলে দেয়।
গ্রাম থেকে মান্ডি এসে তিনি সেনাবাহিনীর পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন, এবং গত এক বছর ধরে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সম্প্রতি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে, নিজের নাম দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
করিশ্মা বলেন, “কখনোই নিজের স্বপ্নকে মাটিতে মিশে যেতে দিইনি। আর্থিক অনটন থাকা সত্ত্বেও স্বপ্নটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো।” আগামী মাসে তিনি চেন্নাইয়ে অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে যোগ দেবেন।