পর্যটকদের কঠোর বিধিনিষেধে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পলিথিন ব্যবহার, প্রবাল ও সামুদ্রিক প্রাণী সংগ্রহ, বারবিকিউ পার্টি এবং রাতে সৈকতে হইচই করা নিষিদ্ধ। এসব নিষেধাজ্ঞা মানতে না পারলে পর্যটকদের উপর নজরদারি করা হচ্ছে। দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা পর্যটকদেরও সন্তুষ্ট করেছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত রবিবার সেন্ট মার্টিনে পৌঁছেছে পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি বার আউলিয়া। এই জাহাজে ৬৫৩ জন পর্যটক ছিলেন, যারা সরকারি নিয়ম মেনে অনলাইনে নিবন্ধন করে জাহাজে ওঠেন। এর মধ্যে ৩৫৫ জন পর্যটক রাত কাটিয়েছেন, বাকিরা দিনে এসে ফিরে গেছেন।
গত ১ নভেম্বর থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন এবং কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হলেও কিছু জটিলতার কারণে এতদিন পর্যটকরা দ্বীপে যেতে পারেননি। সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, সোমবার সকালে ৬৪৪ জন পর্যটক নিয়ে এমভি বার আউলিয়া আবারও সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে এবং সন্ধ্যায় কক্সবাজারে ফিরে আসবে। দুই দিনের মধ্যে আরও দুটি জাহাজ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন ২,০০০ পর্যটক সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণ ও রাত যাপন করতে পারবেন। তবে, ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে, এবং তখন কোনো পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন না, জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এবং যারা দুই হাজারের বেশি আসবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পর্যটকদের খুশি, তবে সতর্ক নজরদারি
পর্যটকরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিচ্ছন্ন ও কোলাহলমুক্ত সৈকতে ভ্রমণ করতে খুশি। তবে, সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার আগে ও পরে পর্যটকদের পলিথিন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য তল্লাশি করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মীরা তাদের হাতে এসব পণ্য থাকলে তা রেখে দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইভাবে, প্রবাল বা সামুদ্রিক প্রাণী সংগ্রহ করাও নিষিদ্ধ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিন জানান, পলিথিন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দ্বীপের পরিবেশের ক্ষতি করছে, তাই এসব ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, রাতে সৈকতে বারবিকিউ পার্টি ও হইচই করা, এবং আলো জ্বালিয়ে সৈকত আলোকিত করা নিষিদ্ধ, কারণ এটি কাছিমসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
হোটেল ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ
দ্বীপে পর্যটকদের রাত যাপনের জন্য ২৩০টিরও বেশি হোটেল ও কটেজ রয়েছে, যার মোট ধারণক্ষমতা ২৩,০০০। তবে, অনেক হোটেল মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। উদাহরণস্বরূপ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম সৈকতে একটি হোটেলের এক কক্ষে ভাড়া ৫,৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে, যেটি সাধারণত ৩,০০০ টাকার মধ্যে থাকতে পারে। এক হোটেল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, পর্যটন ব্যবসা দেরিতে শুরু হওয়ায়, মালিকের নির্দেশে ভাড়া কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এভাবেই, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভ্রমণ এখন কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চলছে, তবে পরিবেশ রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপগুলি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং পর্যটকরা।