মানিকগঞ্জে এমআরআই যন্ত্র দুটি বন্ধ, রোগীরা বিপাকে
প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন বছর আগে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) যন্ত্র স্থাপন করা হয়। তবে যন্ত্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পর তা অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত যন্ত্রটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়নি। একই সমস্যা জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এমআরআই যন্ত্রেও দেখা দিয়েছে, যা কিনা প্রায় ১৮ কোটি টাকায় কেনা হয়েছিল। দক্ষ জনবল না থাকায় এই যন্ত্রও চালু করা যায়নি। ফলে, রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এমআরআই পরীক্ষা করাতে, যা তাদের জন্য বাড়তি খরচের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, এসটিএমএস, এমআরআই যন্ত্রটি সরবরাহ করে। পরবর্তী বছর এটি স্থাপন করা হয় এবং ২০২১ সালের মার্চে ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের একটি টেকনিক্যাল দল যন্ত্রটি পরিদর্শন করে। তবে ২০২২ সালের মার্চে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পর যন্ত্রটি অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশেষজ্ঞ দল সেটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়। এরপর থেকে যন্ত্রটি চালু হয়নি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে এমআরআই যন্ত্রের কক্ষ তালাবদ্ধ দেখা যায়। যন্ত্রের অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির কক্ষও তালাবদ্ধ ছিল।
এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান মো. হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া জানান, “যন্ত্রটি দুই বছর আগে চালু করার পর কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। তারপর থেকে তা আর চালু হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
অপরদিকে, ২০২1 সালের ১১ অক্টোবর জেলা সদর হাসপাতালে এমআরআই যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। তবে দক্ষ টেকনোলজিস্টের অভাবে এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ দুই বছর পর গত বছরের অক্টোবর মাসে মাত্র দুজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে যন্ত্রটি চালু করা হয়। তবে, দুই সপ্তাহ পর একজন টেকনোলজিস্ট অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় আবারো যন্ত্রটি বন্ধ পড়ে থাকে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন জানান, “টেকনোলজিস্ট নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়েছে।”
জেলা হাসপাতালে এমআরআই যন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার হিজুলী গ্রামের অতীন্দ্র চক্রবর্তী (৫৩) নামে এক রোগী বলেন, “মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছি এবং চিকিৎসক এমআরআই পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন, তবে এখানকার হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রটি চালু না থাকায় আমি বাধ্য হয়ে ঢাকার সাভারে বেসরকারি হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা করিয়েছি। এতে আমাকে অতিরিক্ত টাকা ও যাতায়াত খরচ গুনতে হয়েছে।”
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই যন্ত্র দুটি বন্ধ থাকায় রোগীদের জটিল রোগনির্ণয়ের জন্য ঢাকায় গিয়ে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত, দ্রুত যন্ত্রগুলোর কার্যক্রম চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া।”