মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীর গুরুতর রোগ ও তার পরিবারের অভিজ্ঞতা
২০২২ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগমের গুরুতর একটি রোগ শনাক্ত হয়। ১০ ডিসেম্বর তার অস্ত্রোপচারের নির্ধারিত দিন ছিল।
রাহাত আরা বেগমের অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি চলাকালীন, ৮ ডিসেম্বর ২০২২ দিবাগত মধ্যরাতে মির্জা ফখরুলকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) আটক করে। এই ঘটনা তার পরিবারে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি করে।
মির্জা ফখরুলের মেয়ে শামারুহ মির্জা, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন পোস্টে সে সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “৫ বা ৬ ডিসেম্বর ফোনে আব্বু আম্মুর রোগ শনাক্ত হওয়ার খবর দেন। তিনি আমাকে বলেন, ‘চিন্তা করো না, ১০ তারিখে অপারেশন হবে, তারপর ফেব্রুয়ারিতে কেমো শুরু হবে।’ তবে ৮ বা ৯ ডিসেম্বর রাতে ফোনে আম্মু আমাকে জানায়, ‘আব্বুকে নিয়ে গেছে ডিবি।’ আমি অসহায় হয়ে পড়েছিলাম।”
২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, আর তার আগে পুলিশ ঢাকায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। সেই সময়ে হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শামারুহ আরও লিখেছেন, “আম্মুর অপারেশনের জন্য আমি ঢাকা আসতে চাইলাম, কিন্তু টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না, এবং যেটি পাওয়া গেল, তার দাম ছিল আকাশচুম্বী। তবে আমি কোনোভাবেই যেতে হয়েইছিলাম। ঢাকা পৌঁছানোর পর, আব্বু আমার সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর চোখে পানি ছিল, এবং বলেছিলেন, ‘মা, তুমি তোমার মায়ের ব্যাপারটা দেখো।'”
অস্ত্রোপচারের দিন শামারুহ তার মায়ের পাশে ছিলেন। চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেন, কিন্তু রাহাত আরা প্রথমে অপারেশন করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “তোমার আব্বুকে ছাড়া আমি অপারেশন করব না।” তবে পরিবারের সদস্যদের আশ্বাসে তিনি রাজি হন। হাসপাতালে পুরো সময়জুড়ে শামারুহের সঙ্গে ছিলেন এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, এবং অনেকেই তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
শামারুহ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমানকে একজন অসাধারণ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দুদিন পর মির্জা ফখরুল জামিনে মুক্তি পান।
২০২৩ সালের মার্চে, মির্জা ফখরুল তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিঙ্গাপুর যান, যেখানে রাহাত আরা বেগমের কেমোথেরাপি শুরু হয়। পরে, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসকরা তাঁর স্ত্রীর আরও চিকিৎসার পরামর্শ দেন। একই সময়ে মির্জা ফখরুল নিজেও চিকিৎসককে দেখানোর জন্য সিঙ্গাপুর যান। শামারুহও সেখানে গিয়েছিলেন।
অক্টোবর মাসে মির্জা ফখরুলকে আবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। শামারুহ তাঁর ফেসবুকে এই ঘটনার উল্লেখ করে লিখেছেন, “আব্বুকে আবার জেলে নিয়ে গেল! আর ভালো লাগে না।” তিনি আরও লিখেছেন, “শুনলাম, আমাদের অনলাইন পলিটিক্স আমার মায়ের অসুখ নিয়ে নোংরামি করছে। আমি কল্পনাও করতে পারি না, আমার মা ও আব্বু কী ভাবছেন।”
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত শামারুহ প্রথম আলোকে বলেন, “আমার বাবা বহু বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, কারাগারে কাটিয়েছেন। তাঁর এই ত্যাগের জন্য আমাদের পরিবার অনেক কষ্ট করেছে। কিন্তু যখন এমন একজন মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয়, তখন তা খুবই কষ্টদায়ক। এ কারণেই আমি ফেসবুকে সেই দিনের কথা লিখেছি।”
এটি ছিল শামারুহ মির্জার পিতা-মাতা এবং তাদের পরিবারের জন্য এক কঠিন সময়ের স্মৃতিচারণ, যেখানে পরিবারের সদস্যরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছেন, পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগ্রামের ফলে তাদের জীবনে আসা অশান্তি ও অপপ্রচারের বিষয়টিও উঠে এসেছে।