পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় শুঁটকি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে
পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় শুঁটকির উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ছে। বর্তমানে দুই উপজেলার ২৫টির বেশি শুঁটকিখোলায় কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার ফলে ২০০-রও বেশি নারী কর্মসংস্থান পেয়েছেন। উৎপাদিত শুঁটকি এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে, এমন তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উৎপাদকেরা।
পাবনার মৎস্য কার্যালয় ও শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা জানাচ্ছেন, পাবনা জেলার উত্তরাঞ্চল মৎস্য উৎপাদনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বিশেষত বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মাছের গুণগত মান বেশ ভালো। বেড়ায় সাতটি এবং সাঁথিয়ায় দশটি বিল রয়েছে, যেখানে অক্টোবর থেকে মাছ ধরা পড়ে। এছাড়া, দুই উপজেলার নদী ও খাল থেকে প্রচুর মাছ সংগ্রহ করা হয়, যা শুঁটকি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। এ দুটি উপজেলায় অন্তত ২৫টি শুঁটকিখোলা রয়েছে, যা নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় চার মাস চালু থাকে।
দেলোয়ার হোসেন, একজন শুঁটকি ব্যবসায়ী, জানিয়েছেন, পাবনা জেলার শুঁটকির মান বেশ ভালো, বিশেষ করে ভারতে পুঁটি শুঁটকির চাহিদা অনেক বেশি। মালয়েশিয়াতেও শুঁটকি রপ্তানি করা হয়।
পাবনা জেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত বছর পাবনায় ১৫৬ টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়েছিল, যার বেশিরভাগই ভারতে রপ্তানি হয়। এবছর ১৬০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার শুঁটকি উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগর, চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলাগুলি।
মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাবনার চলনবিল, গাজনার বিলসহ বিভিন্ন বড়-বড় বিলের মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু, যার কারণে ভারতে পাবনার শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে পাবনার স্থানীয়রা শুঁটকি খেতে তেমন আগ্রহী নয়, ফলে এখানে উৎপাদিত শুঁটকির ৯০% এর বেশি বিদেশে রপ্তানি হয়। শুঁটকি রপ্তানি বাড়ানোর কারণে উৎপাদনও বাড়ছে।
এছাড়া, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় শুঁটকিখোলাগুলোর মধ্যে শোনা গেছে, বেশিরভাগ কর্মীই নারী। তাঁরা প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা মজুরিতে শুঁটকি উৎপাদনে কাজ করেন। এসব নারীরা শুঁটকিখোলায় কাজ করে নিজেদের সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছেন।
এ অঞ্চলে উৎপাদিত শুঁটকি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের হয়, যেমন শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, ট্যাংরা, টাকি, চাপিলা, বাইম ইত্যাদি। শুঁটকির মূল অংশ সৈয়দপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান এবং সেখান থেকে শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
একটি বড় শুঁটকিখোলার মালিক, সাইফুল ইসলাম ও জহুরুল ইসলাম জানান, তাদের শুঁটকিখোলা সাঁথিয়া ও বেড়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়। তারা আশা করছেন, এই মৌসুমে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা দামের ৭-৮ টন শুঁটকি উৎপাদন হবে। গত বছর, তাদের শুঁটকিখোলায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল এবং এবছর আরও বেশি লাভের প্রত্যাশা রয়েছে।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, বেড়া ও সাঁথিয়ার শুঁটকির বিশেষ সুনাম রয়েছে। এখানে উৎপাদিত শুঁটকির একটি বড় অংশ বিদেশে রপ্তানি হয়, আর শুঁটকিখোলায় নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।