রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে প্রকাশ্যে বিক্রি হলো ৫২ কেজি ওজনের মহাবিপন্ন বাগাড় মাছ
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে গতকাল রোববার বিকেলে ৫২ কেজি ওজনের একটি মহাবিপন্ন বাগাড় মাছ প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে। পাবনা অঞ্চলের জেলেরা পদ্মা নদী থেকে মাছটি শিকার করে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী এই মাছটি ৭৩ হাজার টাকায় কিনে নেন। যদিও বাগাড় মাছ শিকার ও বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ, তবুও এটি প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে পাবনার ত্রিমুনী অঞ্চলের জেলে জগা হালদার জাল ও নৌকা নিয়ে মাছ শিকারে যান। তিনি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া কলার বাগান এলাকায় জাল ফেলেন। কিছুক্ষণ পর তার জালে কিছু ভারি বস্তুর ঝাঁকি পেয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে, কিছু বড় মাছ আটকা পড়েছে। নৌকায় মাছ তুলে দেখেন একটি বিশাল আকারের বাগাড় মাছ। পরে, জেলে এবং তার সঙ্গীরা মাছটি বিক্রির জন্য দৌলতদিয়া বাজারে আবদুল হালিমের আড়তে নিয়ে আসেন, যেখানে মাছটির ওজন ৫২ কেজি ২০০ গ্রাম মাপা হয়। আড়তদার মাছটি প্রকাশ্যে নিলামে তুললে ফেরিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মাছটি কিনে নেন।
শাহজাহান শেখ বলেন, তিনি ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে মাছটি কিনে মোট ৬৭ হাজার ৮০০ টাকা দেন। পরে, মাছটি বিক্রির জন্য তিনি নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিও পোস্ট করেন এবং পরিচিতদের কাছে যোগাযোগ করেন। বিকেলের দিকে, টাঙ্গাইলের একজন ব্যবসায়ী মাছটি ৭৩ হাজার টাকায় কিনে নেন, এবং সন্ধ্যার আগেই তা টাঙ্গাইলে পৌঁছে যায়।
তবে, বাগাড় মাছ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী হওয়ায় এর শিকার ও বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে শাহজাহান শেখ বলেন, “পদ্মা ও যমুনা নদীতে জেলেরা অন্যান্য মাছের সঙ্গে বাগাড়ও শিকার করছেন। বাজারে অনেক মানুষ উপস্থিত থাকার কারণে মাছটি নিলামে বিক্রি হয়েছে। এখানে কখনও দেখি না সরকারিভাবে বাগাড় মাছ বিক্রি বন্ধে কোনো অভিযান চালানো হয়।”
আইইউসিএনের তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুসারে, বাগাড় শিকার, ধরা ও বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে, আইনটির বাস্তবায়ন যথেষ্ট কার্যকর না হওয়ায়, বাগাড়ের শিকার ও বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন মৎস্যজীবী জানান, এই মৌসুমে রাজবাড়ী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, এবং মানিকগঞ্জ অঞ্চলে অনেক বাগাড় মাছ শিকার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে, গোয়ালন্দ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজবাড়ী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, “বাগাড় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২–এর আওতায় আসায় মৎস্য সংরক্ষণ আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে, বন বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।”