অ্যারেসি বা কচু গোত্র: উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য ও পরিচিত সদস্য
অ্যারেসি বা কচু গোত্র একবীজপত্রী উদ্ভিদের একটি পরিবার, যা পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময়। এই গোত্রের উদ্ভিদগুলি সাধারণত প্যাডিক্স নামে পরিচিত এক ধরনের পুষ্পমঞ্জরিতে ফুল ফোটায়। পুষ্পমঞ্জরিটি সাধারণত একটি পাতার মতো ব্রাক্ট দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে আবৃত থাকে। ইংরেজিতে এই গোত্রকে অ্যারাম বা অ্যারোয়েড বলা হয়, এবং এতে প্রায় ১১৫টি গণ ও ৩,৭৫০টি প্রজাতি রয়েছে।
কচু এই গোত্রের একটি পরিচিত সদস্য, যার মধ্যে কিছু প্রজাতি খাওয়া যায়, আবার কিছু বিষাক্তও হয়। কচু গোত্রের উদ্ভিদগুলির মধ্যে বেশ কিছু প্রজাতি তাদের বৈচিত্র্যময় পাতা এবং পুষ্পমঞ্জরির জন্য আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। নিচে দুটি পরিচিত উদ্ভিদ তুলে ধরা হলো:
ব্লাশিং ফিলোডেনড্রন (Philodendron erubescens)
ব্লাশিং ফিলোডেনড্রন বা লাল পাতার ফিলোডেনড্রন, এই উদ্ভিদটি Araceae গোত্রের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি সাধারণত বাগানে বা টবে এক আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে লাগানো হয়। উদ্ভিদটির উচ্চতা ৩ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে, এবং এর পাতা হৃৎপিণ্ড আকৃতির। পাতা ৪০ সেমি পর্যন্ত বড় হতে পারে। ফুলগুলি গভীর লাল রঙের হয় এবং গ্রীষ্ম ও শরৎকালে ফোটে।
এটির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ: Philodendron মানে “ভালোবাসার উদ্ভিদ” এবং erubescens মানে “রক্তিম”। এর পাতাগুলি চকচকে সবুজ, এবং পাতার নিচের দিকে লালচে-তামাটে আভা থাকে। নতুন পাতা এবং কাণ্ডও গাঢ় লাল হয়, যা এই উদ্ভিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। উদ্ভিদটি দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়া অঞ্চল থেকে এসেছে।
যদিও এটি একটি সুন্দর ইনডোর উদ্ভিদ, তবে এটি বিষাক্ত। মানুষ এবং প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই এটি ছোট বাচ্চা বা পোষা প্রাণীদের কাছে রাখা উচিত নয়। এই উদ্ভিদটি কম আলোযুক্ত স্থানে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়, তবে টবে তেমন বড় হয় না।
হাউসপ্ল্যান্ট অ্যাগ্লোনেমা (Aglaonema)
অ্যাগ্লোনেমা, একটি চিরহরিৎ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যার পাতাগুলি রঙিন ও আকর্ষণীয় গঠনসম্পন্ন। এটি আধুনিক বসার ঘর, অফিস, কিংবা স্নিগ্ধ বেডরুমের জন্য একটি আদর্শ হাউসপ্ল্যান্ট। অ্যাগ্লোনেমা আর্দ্র এবং শুষ্ক উভয় পরিবেশে সহনশীল, এবং এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আদি উদ্ভিদ। সাধারণত এর ভ্যারাইটিগুলিকে “চায়নিজ গ্রিন” বলা হয়।
এই উদ্ভিদটি ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে এবং ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায়। এর বৈচিত্র্যময় রঙের কারণে এটি হাউসপ্ল্যান্ট হিসেবে আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
অ্যাগ্লোনেমা বিভিন্ন প্রজাতি এবং জাত নিয়ে বিদ্যমান, এবং এটি পরিবেশে স্থিতিশীল থাকলেও, আধুনিক ঘরবাড়ি বা অফিসের সাজসজ্জায় এক বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে।