এ বছর বাংলাদেশে নতুন করে ১ হাজার ৪৩৮ জন এইডস আক্রান্ত হয়েছেন, যা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালে রেকর্ড হয়েছে। এই সময়কালে এই রোগে ১৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইচআইভি (এইডস ভাইরাস) শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এবারের সংখ্যা সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এইডস সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরবে। এবারের বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস চলে যাবে”।
য although আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, এই বছর এইডসে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তবে তরুণদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে, এবং বিবাহিতদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি। এছাড়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং হিজড়াদের মধ্যেও সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তরুণ বয়সী এবং হিজড়া ও রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এক ব্যক্তি এইচআইভি আক্রান্ত হন। এরপর প্রতিবছর আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও ২০২০ সালের করোনা সংক্রমণের বছর কিছুটা কমে গিয়েছিল। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭৬, যা চলতি বছরে ১৬২ জন বেড়ে ১ হাজার ৪৩৮-এ পৌঁছেছে।
এই বছর নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩% ব্যক্তি ২৫-৪৯ বছর বয়সী, এবং ২১% ২০-২৪ বছর বয়সী। গত বছর এই বয়সী আক্রান্তের হার ছিল ১৬%। রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে আক্রান্তের হার ১০% এবং হিজড়াদের মধ্যে ১%। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি-এল অ্যান্ড এএসপির লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেছেন, “বিশ্বব্যাপী তরুণ জনগণ এইচআইভির ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত, এবং আমাদের দেশে এটি একই ধরনের প্রবণতা দেখাচ্ছে।”
এছাড়া, স্বাস্থ্য সেবার প্রসার এবং আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে এইচআইভি সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রচারণার কাজ কিছুটা কমে গেছে, বিশেষ করে বৈদেশিক সহায়তার অভাবের কারণে। ইউএনএইডসের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সায়মা খান এইচআইভির সংক্রমণ কমাতে তরুণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই বছর নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৫৫% বিবাহিত, ৪০% অবিবাহিত এবং ৫% বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত। ঢাকা বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত বছর এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২৬৬ জনের, যা এবছর ১৯৫-এ কমেছে। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নতির পরেও, আক্রান্তদের মৃত্যু সংখ্যার ওপর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এইডসের ঝুঁকি কমানোর জন্য পিআরইপি (প্রিই এক্সপোজার প্রিভেনশন) নামক কার্যকরী ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, দেশের অধিকাংশ জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালেই এইচআইভি পরীক্ষা করা সম্ভব হলেও, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে এর ব্যবস্থা নেই, যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।