গানে গানে কিংবদন্তি রুনা লায়লা পূর্ণ করছেন ছয় দশক। তিনি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। বাংলাদেশের শিল্পীদের পাশাপাশি উপমহাদেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের সঙ্গে রয়েছে তার গভীর বন্ধুত্ব। বয়সে ছোট যারা, তাদের অনেকেই রুনা লায়লাকে এক অন্যরকম আদর্শ হিসেবে মানেন। তবে সংগীত জগতে এই বরেণ্য শিল্পীকে একসময় বয়কট করা হয়েছিল। সমসাময়িক শিল্পীরা তার সঙ্গে মঞ্চে উঠতে বা একসঙ্গে গান গাইতে চাইতেন না। কিন্তু এসব নিয়ে রুনা লায়লা একটুও বিচলিত হননি। নিজস্ব সুরে গান গেয়ে গেছেন তিনি।
রুনা লায়লা বলেন, ‘সবাই দেখল, আমি ছবিতে গান করছি, কেউ বয়কট মানছে না। মিউজিশিয়ানরাও বাজাচ্ছে, মিউজিক ডিরেক্টররাও কাজ করছে। আর শ্রোতার ভালোবাসা এতটাই ছিল যে, সেই বয়কটও টেকেনি।’ সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
জীবনের প্রথম দিকটা পাকিস্তানে কেটেছে রুনা লায়লার। সেখানেই গানে গানে দিন কাটিয়েছেন। বাবার চাকরির কারণে সেখানে থাকতেন তিনি। ৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে রুনাকে অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন, তবে কিছু লোক ঈর্ষান্বিতও ছিল। ফলে তিনি বারবার বাধার মুখে পড়েন।
কিভাবে এসব বাধা কাটিয়ে উঠেছিলেন, এমন প্রশ্নে রুনা লায়লা জানান, ‘জীবনকে ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। নিজে যদি ইতিবাচক থাকি, সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। মনের শক্তি থাকলে অনেক বাধা পার করা যায়। আমার জীবনে অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু কোনো দিন আমাকে কারও কাছে গিয়ে কাজ চাইতে হয়নি। আল্লাহর রহমতে সবসময় কাজের প্রস্তাব আমার কাছে এসেছে। বাধা এলে আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ সব দেখছেন, বিচার করবেন।’
রুনা লায়লা বলেন, ‘আমি কখনও ভেঙে পড়িনি। আমি বিশ্বাস করতাম, যদি আমার মধ্যে সঠিক প্রতিভা থাকে, আমি সব বাধা অতিক্রম করতে পারব। শ্রোতাদের ভালোবাসা, মানুষের শ্রদ্ধা আমাকে কখনও হতাশ হতে দেয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয়, আমার পরিবার সবসময় আমার পাশে ছিল।’
তবে সংগীত জগতের নানা রাজনীতির খবরও তার নজর এড়ায়নি। সেগুলো মোকাবিলা করতে তিনি গানকেই অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আজ পর্যন্ত তিনি এভাবেই চলেছেন, জানান তিনি।
এছাড়া রুনা লায়লা বলেন, ‘বাধার মুখে পড়ার সময় অনেক লেখালেখি হয়েছিল। আমার ভক্তরা জানত আমার সঙ্গে কী হচ্ছে। আর আমি কখনও নেতিবাচক বিষয় নিয়ে উত্তেজিত হইনি বা ভয় পাইনি। আমি বিশ্বাস করতাম, যারা আমাকে নিয়ে নেতিবাচকতা ছড়াচ্ছিল, তাদের ভুল একদিন ধরা পড়বে। আমি জানতাম, আল্লাহ সব দেখছেন। তবে আমি কাউকে কখনও বদদোয়া দিইনি। আমি সবসময় ভালোবাসার পথে চলেছি।’
এই মূল্যবোধের শিক্ষা রুনা লায়লা পেয়েছেন তার পরিবার থেকে। তিনি বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় মা-বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা পেয়েছি। তারা আমাদের শিখিয়েছে, কারও ক্ষতি না করে, যতটা পারি, ভালো কাজ করতে হবে। আমি ও আমার ভাইবোনরা এই শিক্ষায় বড় হয়েছি এবং এখনও সেই পথে চলছি।’