বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্পে বিপুল অর্থের অপচয়
বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। তবে, এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থ অপচয় এবং দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এই অপচয়, লুটপাট এবং অতিরিক্ত খরচের মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং অনিয়মিত প্রকল্প বাস্তবায়নকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের শ্বেতপত্রে এসব অভিযোগ উঠে এসেছে, যা সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতি প্রশ্ন তুলেছে।
সরকারি শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, এডিপির মাধ্যমে খরচ হওয়া প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার (৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) থেকে ২৩% থেকে 40% অর্থ দুর্নীতি এবং অপচয়ের শিকার হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ বাস্তবায়ন না করেই, কিংবা অযৌক্তিকভাবে খরচ বাড়িয়ে, এসব অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। কিছু প্রকল্পে কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারের বিল তুলে নেওয়া এবং অতিরিক্ত খরচ দেখানোর ঘটনা ঘটেছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “এডিপির মাধ্যমে সরকারের বিনিয়োগে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়েছে। অনেক প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই কাজ শুরু করা হয়েছিল, যা পরে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি এবং অকার্যকর হয়ে ওঠে।”
একটি উদাহরণ হিসেবে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব অশোক মাধব রায়ের নেতৃত্বে ২০১৬ সালে হবিগঞ্জ জেলায় বাল্লা স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করেও, এর ফলশ্রুতিতে কোনো কার্যকরী বাণিজ্য বাড়েনি, কারণ ভারতীয় সীমান্তের দিকে কোনো স্থলবন্দর নেই।
অপর একটি উদাহরণ হিসেবে, সরকার অনেক স্থলবন্দর এবং রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল, কিন্তু এসব প্রকল্পে খরচ বাড়ানোর পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসেনি। যেমন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও, প্রকল্পের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি এবং প্রভাবশালী ঠিকাদাররা কাজ না করেই বিল উত্তোলন করেছেন।
এছাড়াও, সরকার বিভিন্ন ভবন নির্মাণ প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা খরচ করেছে, যেগুলো ব্যবহার হয়নি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করে একটি ৭ তারকা মানের অতিথিশালা নির্মাণ করা হয়, যা এখনও ব্যবহার করা হয়নি।
এডিপির আকার ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা ছিল, কিন্তু গত ১৫ বছরে তা ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমান অর্থবছরে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। তবে, এই বিপুল ব্যয়ের পরেও প্রকল্পগুলো সফলতার মুখ দেখেনি এবং অনেক ক্ষেত্রে অপচয় ও দুর্নীতি হয়ে গেছে।
বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রভাবশালী ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ দেওয়ার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত মানে বড় ধরনের ফাঁকফোকর দেখা গেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
4o mini