ভারতের অযাচিত উদ্বেগ এবং দ্বিচারিতা
ভারত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যে অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তা অব্যাহত রয়েছে। তবে ভারত নিজ দেশের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যে অসংখ্য নির্মমতা ঘটে চলেছে, তা নিয়ে তারা কোনও সংকোচ বা অনুশোচনা প্রকাশ করছে না। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং আপত্তিকর।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পোস্টে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ (৬৪.১ শতাংশ) মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংখ্যালঘু জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় আরও বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা নিজেরাও দেখেছি, কীভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, মাদ্রাসা এবং রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রতিক দুর্গাপূজায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছে। এমনকি, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম ধৈর্য এবং সংযমের পরিচয় দিয়েছেন।”
গত মঙ্গলবার, ভারত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদনের খারিজ হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে, এবং এই প্রেক্ষাপটে চিন্ময়ের গ্রেপ্তার তাদের উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের বিবৃতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে, এবং ভারত যে মন্তব্য করেছে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। তারা আরও বলেছে, “এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি প্রতিবেশী দেশগুলোর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিরুদ্ধে যায়।”
ভারতীয় সংসদেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এবং ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কৃতি বর্ধন সিং বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অথচ, বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটলেও, ভারত নিজ দেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর যে অগণিত নৃশংসতা চলছে, তা নিয়ে তাদের কোনও সমালোচনা নেই। আসিফ নজরুলের মতে, ভারত এই দ্বিচারিতার মাধ্যমে নৈতিকভাবে অগ্রাহ্যযোগ্য অবস্থানে রয়েছে।