পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ইমরান খানের দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে বন্দী হওয়া এবং বুশরার নিজেও কিছু সময় কারাগারে থাকলেও, গত মাসে তিনি মুক্তি পান। এর পরই ইসলামাবাদে শুরু হয় বিক্ষোভ-আন্দোলন, যার মুখ হয়ে উঠেছেন বুশরা বিবি।
এই আন্দোলনটি মূলত ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে গড়ে উঠেছে। গত সোমবার রাতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রায় ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক ইসলামাবাদের ডি-চক এলাকায় পৌঁছান। তবে, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের মধ্যরাতে হটিয়ে দেয়, ফলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বুশরা বিবি আন্দোলনে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আসেন, যা পূর্বে বিরল ছিল। লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসমা ফাইজ বলেন, ‘‘বুশরা কখনও অরাজনৈতিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি একেবারে ভিন্ন রূপে নিজেকে দেখিয়েছেন।’’
পাকিস্তান সরকার বুশরার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, তিনি ইসলামি আইন লঙ্ঘন করে ইমরান খানকে বিয়ে করেছেন এবং দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ইসলামাবাদে আন্দোলনের মধ্যে, বুশরা ট্রাকের ওপর উঠে পিটিআই সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আজ আপনাদের একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে—যতক্ষণ না ইমরান খান এখানে আসছেন, ততক্ষণ আপনি এই স্থান ছাড়বেন না।’’ তার এই বক্তব্যকে নিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি মন্তব্য করেছেন, ‘‘বুশরা বিবি এই সংঘাতের জন্য একাই দায়ী।’’
ইমরান খানের রাজনৈতিক যাত্রার শুরু হয় যখন তিনি আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা খুঁজতে বুশরা বিবির কাছে যান। এর পরপরই তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় এবং ২০১৮ সালে তারা বিয়ে করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেন।
২০২২ সালে, ইমরান অনাস্থা ভোটে পরাজিত হলে, বুশরাও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের আগের দিন বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘‘বুশরা বিবি ইমরান খানের সাথে সম্পর্কের কারণেই বিক্ষোভকারীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছেন। তবে, বুশরার উপস্থিতি পিটিআই দলের ভেতরে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বুশরার এই ভূমিকা দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’’
একদিকে, বুশরা বিবি ইমরান খানের পক্ষে কাজ করছেন, অন্যদিকে তার বোন আলিমার জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি করছেন। কারাগারে থাকার সময়, ইমরান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা দিয়েছিলেন, ‘‘বুশরা শুধুমাত্র আমার বার্তা পৌঁছে দেন, তার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই।’’
পাকিস্তানে রাজনীতিতে বেশ কয়েকজন নারী প্রবেশ করেছেন, যেমন বেনজির ভুট্টো এবং মারিয়াম নওয়াজ। এই প্রেক্ষাপটে, একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘‘যখন দাবার সৈনিকরা পরাজিত হয়, তখন রানি এগিয়ে আসেন।’’ বুশরার আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও তার বক্তব্যকে প্রশংসা করা হচ্ছে।
এখন দেখার বিষয় হলো, ইমরান খানও কি তার পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো অবস্থান থেকে বুশরার ঘাড়ে ভর দিয়ে একই পথে হাঁটবেন?