কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (যুদ্ধসমাধি) থেকে জাপানি সৈনিকদের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে সম্পন্ন হয়েছে। ৮১ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জন জাপানি সৈনিককে এখানে সমাহিত করা হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত ২৩ জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। একটি সমাধিতে দেহাবশেষের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। এই সমাধিক্ষেত্রটি কমনওয়েলথ গ্রেভ ইয়ার্ড কমিশন দ্বারা পরিচালিত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে ২৪টি জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরানোর কাজ শুরু হয়। ২৪ নভেম্বর খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে ২২ নভেম্বর বিকেল ৫টার দিকে কাজটি সম্পন্ন করা হয়। সমাধিগুলোর মধ্যে ২৩টিতেই সৈনিকদের দেহাবশেষের অংশ পাওয়া গেছে, যেগুলো জাপানের ফরেনসিক দল ঢাকায় নিয়ে গেছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, যিনি এ কাজে জাপানিদের সহায়তা করেছেন, জানান যে, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা গত ১৩ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করেন। এই দলের মধ্যে ছয়জন ছিলেন জাপানি এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তারা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় কাজটি সম্পন্ন করেছেন। ৮১ বছর পর ২৩টি সমাধি থেকে সৈনিকদের কিছু কঙ্কাল, মাথার খুলি এবং অন্যান্য শরীরের হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে একটি সমাধিতে কোনো দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক দলের ধারণা, ওই সৈনিকের বয়স খুব কম ছিল, ফলে তার দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি।
কাজী সাজ্জাদ আলী জহির আশা করছেন, উদ্ধার করা দেহাবশেষের পরীক্ষাগার পরীক্ষা থেকে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে, এই সমাধিগুলোর পুনঃখনন করে মাটি ভরাট করা হবে এবং জাপানি সৈনিকদের নামসহ একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হবে।
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে নিহত ১৩টি দেশের ৭৩৮ জন সেনার সমাধিস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৬২ সালে একটি সমাধি থেকে এক সৈনিকের দেহাবশেষ তার পরিবারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। এবার, ৮১ বছর পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরানোর কাজ সম্পন্ন হলো।