ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি যুক্তরাষ্ট্রে এক বড় ধাক্কা খেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভারতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বিস্তৃত প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে সমাধান আসতে পারে।
গৌতম আদানি, যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এই অভিযোগের সম্ভাব্য প্রভাব তার বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের ওপর পড়তে পারে, যা প্রায় ১৬,৯০০ কোটি ডলারের। এতে তার ১০টি প্রতিষ্ঠান একদিনেই ৩,৪০০ কোটি ডলার বাজারমূল্য হারিয়েছে।
মার্কিন ফেডারেল কৌঁসুলিরা জানান, গৌতম আদানি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করতে গিয়ে গোপন তথ্য প্রকাশ না করে ২৫ কোটি ডলার ঘুষ দিয়েছেন। ২০ বছর ধরে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে ২০০ কোটি ডলারের চুক্তি লাভ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। আদানি গোষ্ঠী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং একে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।
এদিকে, গৌতম আদানি ভারতের ব্যবসায়িক দুনিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে আছেন। তিনি ১৩টি বন্দর, সাতটি বিমানবন্দর, এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট ব্যবসার মালিক। তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য প্রধানমন্ত্রী মোদির উন্নয়নমূলক নীতির সঙ্গে মিল রেখেই বিস্তৃত হয়েছে, বিশেষত অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে মনোযোগ দিয়ে।
গৌতম আদানি এবং নরেন্দ্র মোদি দুজনেই গুজরাট রাজ্য থেকে উঠে এসেছেন, এবং তাদের সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনা চলে আসছে। সমালোচকেরা আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ বলে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা লাভের অভিযোগ রয়েছে।
যদিও গৌতম আদানি তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন, তবুও গত বছর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তার বিরুদ্ধে স্টক ম্যানিপুলেশন ও জালিয়াতির অভিযোগ তোলে, যা আদানি গোষ্ঠীর বাজারমূল্য ও বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলেছিল।
বর্তমানে, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে গৃহীত হতে পারে, যার ফলে তার আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে। ইতিমধ্যে কেনিয়া তার সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের চুক্তি বাতিল করেছে, এবং বাংলাদেশে বিতর্কিত জ্বালানি চুক্তি নিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
রাজনৈতিক দিক থেকেও এই অভিযোগগুলো ভারতের রাজনীতিতে প্রতিধ্বনিত হতে পারে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গৌতম আদানির গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এবং সংসদে বিষয়টি তুলবেন বলে জানিয়েছেন। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, মার্কিন-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকবে, কারণ গৌতম আদানি ভারতের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মার্কিন-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোন গুরুতর প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।