বিশ্বের নারী চিত্রশিল্পীদের মধ্যে ফ্রিদা কাহলো এমন একজন যিনি অতুলনীয় জনপ্রিয়তায় পরিচিত। তার কাজের অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং কঠিন, সংগ্রামী জীবনচরিতই তাকে এ পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
ফ্রিদা কাহলো ছিলেন একজন মেক্সিকান শিল্পী, যিনি নিজের জীবন এবং তার যন্ত্রণা ও দুঃখের অভিজ্ঞতা চিত্রে তুলে ধরেছেন, যা তার আত্মজীবনী হয়ে উঠেছে। ১৯০৭ সালের ৬ জুলাই মেক্সিকো সিটিতে জন্মগ্রহণ করা ফ্রিদা ১৯২৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এক ভীষণ বাস দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন, তার বেঁচে থাকা অসম্ভব। দুর্ঘটনায় তার মেরুদণ্ডের একাধিক স্থান ভেঙে যায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তার জন্য আর কখনও সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সে সময়ও তিনি বেঁচে ছিলেন, যা ছিল এক বিশাল আশ্চর্য। এরপর একবার গর্ভধারণ করলেও তার গর্ভপাত ঘটে, এবং এসব ঘটনা তার জীবনদর্শন আমূল পালটে দেয়।
ফ্রিদা এসব অভিজ্ঞতাগুলিকে চিত্রে আকারে বন্দী করেছেন, এমনকি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ছবি আঁকতেন। শারীরিকভাবে নিদারুণ ক্ষতবিক্ষত হলেও, তিনি নিজেকে আঁকতেন, যা তার মানসিক যন্ত্রণা এবং আঘাতের জীবন্ত প্রতিফলন হয়ে উঠেছে।
ছয় বছর বয়সে ফ্রিদা পোলিওতে আক্রান্ত হন, যার ফলে তার একটি পা তুলনামূলকভাবে চিকন হয়ে যায়, এবং এজন্য তার সহপাঠিরা তাকে অবজ্ঞা করতেন। এই অভিজ্ঞতা তার চিত্রকর্মে প্রভাব ফেলেছিল। তাই তিনি প্রায়ই তার চিত্রে নিজেকে লম্বা স্কার্ট পরিধান করা অবস্থায় আঁকতেন। ফ্রিদার চিত্রকর্মের অধিকাংশই ছিল তার নিজের প্রতিকৃতি। দুর্ঘটনা, গর্ভপাত এবং জীবনের দুঃখজনক মুহূর্তগুলিকে তিনি নিজেই চিত্রে রূপ দেন।
ফ্রিদা নিজেই বলেছিলেন, “আমি আমার নিজের ছবি আঁকতে পারি কারণ আমি প্রায়ই একা থাকি এবং আমি নিজেকে সবচেয়ে ভালো জানি। আমি কখনো স্বপ্ন আঁকিনি, আমি আমার বাস্তবতাই আঁকেছি।” তার কিছু বিখ্যাত চিত্রের মধ্যে উইদাউট হোপ, থিংকিং অ্যাবাউট ডেথ, সেলফ পোর্ট্রেইট উইথ নেকলেস, সেলফ পোর্ট্রেইট উইথ মাংকি, সেলফ পোর্ট্রেইট উইথ লুজ হেয়ার, মাই বার্থ, দি বাস, রুটস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ফ্রিদার চিত্রকর্ম মূলত প্রতীকবাদ এবং পরাবাস্তববাদী ধারায় আঁকা, এবং তার কাজগুলো মেক্সিকান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিল। তার চিত্রে নানা প্রতীক, উজ্জ্বল রঙ এবং মেক্সিকান ঐতিহ্য বার বার ফিরে এসেছে।