তারুণ্যের শক্তিতে ‘সব সম্ভব’

সম্প্রতি দেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম আবারো প্রমাণ করেছে তাদের অসীম সম্ভাবনা। তরুণ বয়স এমন একটি সময় যখন সবাই তার সীমা ভেঙে দেয়, অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ব্যর্থতাকে ব্যর্থতা হিসেবে মেনে নেয় না, বরং নতুন চিন্তা ও বড় স্বপ্ন দেখতে চায়, কারণ তারা বিশ্বাস করে, সম্ভবের কোনো সীমানা নেই। বাংলাদেশে জেন-জেড প্রজন্মের বিশ্বাস—সব কিছুই সম্ভব। তরুণদের জীবনযুদ্ধের এমনই কিছু অনুপ্রেরণামূলক গল্প নিয়ে সংকলন সব সম্ভব’ প্রকাশিত হয়েছে। এতে প্রায় শতাধিক তরুণের সাফল্যের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।


যে কোন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্টে তৈরি করুন আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য
কর্পােরেট ওয়েবসাইট
ই-কমার্স ওয়েবসাইট অথবা নিউজপোর্টাল  ওয়েবসাইট।

বইটির নামের প্রেক্ষিতে পাঠক হয়ত ভাবতে পারেন, কীভাবে বদলে গেলো তাদের জীবন? এই পরিবর্তন এসেছে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের হাত ধরে। বান্দরবানের লামায় অবস্থিত এই স্কুলটি তাদের জীবনে এনে দিয়েছে এক নতুন দিশা।

২০০১ সালে, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আল বোখারী মহাজাতক মেক্সিকো-ভিত্তিক স্কুল মডেল অনুসরণ করে বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে মাত্র সাতজন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া কোয়ান্টাম কসমো স্কুল বর্তমানে ২২টি জাতির আড়াই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে শিক্ষিত করছে। এই প্রতিষ্ঠানে মেধা, সুযোগ, এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে নানা জাতির ছাত্র-ছাত্রীরা একসাথে জ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং আধ্যাত্মিকতা নিয়ে আলোকিত হয়ে উঠছে।

কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী তাদের জীবনে অভাব, শারীরিক অক্ষমতা, এবং অন্য সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে এসেছেন, তবে স্কুলে তারা পেয়েছে নিয়মিত মেডিটেশন, ইয়োগা, শুদ্ধাচার চর্চা, এবং সৃজনশীল শিক্ষার সুযোগ। এসব শিক্ষার মাধ্যমে তারা স্বপ্ন দেখে “প্রথম” হওয়ার, এবং এই মনোবলই তাদের আজ দেশের শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পথে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে তারা জাতীয় শিশু-কিশোর কুচকাওয়াজে পাঁচবার প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং ক্রীড়ানৈপুণ্যে দেশসেরা স্কুল হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে।

কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কোয়ান্টা বলা হয়, অর্থাৎ তারা প্রতিটি আলোকিত স্পর্শ। বইটি পড়লে পাঠক যেমন জীবনের কঠিন সংগ্রামের গল্প জানবেন, তেমনি তারা আমাদের দেশের প্রান্তিক জনগণের সংগ্রাম, আশা-নিরাশার গল্পও জানতে পারবেন। ঋণ, তামাক চাষ, মাদক, অবিদ্যা, কুসংস্কার, ডিজিটাল আসক্তি—এই ধরনের সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও সমস্যার সাথে মোকাবিলা করার বাস্তব চিত্র উঠে আসবে। এসব গল্পের পেছনে রয়েছে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের ২৩ বছরের ইতিহাস—এটি আসলে শূন্য থেকে শুরু করা, অসম্ভবকে সম্ভব করার ইতিহাস।

এই বইটি পড়ে, আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, তরুণ প্রজন্মের শক্তিকে অনুভব করবেন। আপনিও অনুপ্রাণিত হবেন, নতুন একটি শুরুর পথে এগিয়ে যেতে, আর আপনারও মুখে উঠবে—সব সম্ভব! বইটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অবহেলিত অবস্থান থেকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর পথে তরুণদের সংগ্রাম এবং জয়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার এই বইটির মূল্য পাঁচশো টাকা, এবং এটি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।

বর্তমানে দেশে জনশক্তির বোনাসকাল চলছে—অর্থাৎ দেশে যুবশক্তি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু, অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি যদি আমাদের সমাজে সৎ, মানবিক ও ইতিবাচক উদার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন ভালো মানুষ না থাকে, তবে সত্যিকারের উন্নতি অর্জিত হবে না। শারীরিক, মানসিক, আত্মিক এবং সামাজিক সুস্থতা ছাড়া মানুষ সৎ হতে পারে না। তাই, রাষ্ট্রীয়ভাবে যুব সমাজকে সুস্থ ও সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তোলার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

আজকের ডিজিটাল যুগে, আমরা অনেক কিছু হারাচ্ছি—শুদ্ধাচার, নৈতিকতা, ও পারিবারিক মূল্যবোধ। তবে, যদি এই মূল্যবোধগুলো ফিরিয়ে আনতে না পারি, তবে শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি করেই একটি দেশ উন্নত হতে পারে না। দেশের প্রকৃত উন্নতি তখনই সম্ভব হবে যখন শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং প্রতিটি মানুষ সৎ ও নৈতিক জীবনের দিকে অগ্রসর হবে।

এভাবে, আমাদের যুবসমাজের প্রচেষ্টায় দেশের উন্নতি এবং মানবিক মূল্যবোধের সংরক্ষণ সম্ভব। সব সম্ভব’ বইটি তারুণ্যের শক্তি এবং সাহসিকতার গল্প তুলে ধরে, যা আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।