“৪১ বছরে বিচার শেষ হয়নি”


৪১ বছর পরও বিচার শেষ হয়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলায়


যে কোন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্টে তৈরি করুন আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য
কর্পােরেট ওয়েবসাইট
ই-কমার্স ওয়েবসাইট অথবা নিউজপোর্টাল  ওয়েবসাইট।

প্রায় ৪১ বছর আগে রাজধানী ঢাকার পুরান এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক শাখা থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলা আজও নিষ্পত্তি হয়নি। এই মামলায় অভিযুক্ত ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা এবং আরও একজন পলাতক রয়েছেন। মামলার ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র তিনজনকে আদালতে হাজির করা গেছে, এবং বেশ কয়েকজন সাক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই মামলার বিচার শেষে রায় ঘোষণার জন্য আদালত নতুন করে ১৪ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছে।

অর্থ আত্মসাতের ঘটনা

১৯৮৩ সালের ২১ অক্টোবর অগ্রণী ব্যাংকের পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার শাখা থেকে ভুয়া চেকের মাধ্যমে ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৭ নভেম্বর ওই বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করে এবং পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর ব্যাংকের ওই শাখার কর্মকর্তা কাজী নুরুল ইসলাম, স্বপন কুমার ভৌমিক এবং আজহারুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে। তবে মামলা দায়েরের পর দীর্ঘ সময়েও মামলার কার্যক্রম এগোয়নি।

প্রথম ৩০ বছর মামলার বাদীকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আরও ১০ বছর ধরে সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয়। শেষপর্যন্ত, গত বছর একটি সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এবং চলতি বছর এপ্রিল মাসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যও নেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে আর কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি।


দুদকের অবহেলা এবং মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ

মামলার সাক্ষী হাজির করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে আদালতে বারবার সময় চাওয়া হয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুদকের সময় চাওয়ার আবেদন নাকচ করে আদালত, এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য করে। ২০ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য সময় চেয়ে আবেদন করা হলেও আদালত তা নাকচ করে ১৪ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেছে।

দুদকের মামলাটি পরিচালনাকারী প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, দীর্ঘকালীন এই মামলায় অনেক সাক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই তাদের হাজির করা সম্ভব হয়নি। তবে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী মনে করেন, রাষ্ট্রপক্ষের অবহেলাই এই মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার মূল কারণ। তিনি বলেন, “এত বছর ধরে চলতে থাকা একটি দুর্নীতি মামলা সমাজে খারাপ বার্তা পাঠায়। যদি রাষ্ট্রপক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করত, তবে এত বছর লাগত না।”

মামলার দীর্ঘ ইতিহাস

এই মামলার সূত্রপাত ১৯৮৩ সালের ২১ অক্টোবর, যখন বিলাস ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখায় ভুয়া চেক জমা দেয়। কাজী নুরুল ইসলাম এবং স্বপন কুমার ভৌমিকের সহায়তায় আবদুল মজিদ নামক এক ব্যক্তি ২ লাখ ২৩ হাজার ৭০০ টাকা তুলে নেন। এই ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক মীর আশ্রাফ আলী ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। দুই বছর পর ১৯৮৫ সালের ১৫ মে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়, কিন্তু মামলা পরবর্তী কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় আটকে থাকে।

২০০৫ সালে হাইকোর্টের রায়ে মামলার কার্যক্রম বাতিল হবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে মামলার বাদীকে ২০১৩ সালে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় এবং এর আট বছর পর ২০২۱ সালে দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দেন।


মামলায় আদালতের নির্দেশনা এবং দুদকের অবস্থা

মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, ১০ বছর ধরে আদালত দুদককে অন্তত ১৫ বার চিঠি দিয়ে সাক্ষী হাজির করার অনুরোধ করেছে। ২০২৩ সালে দুদকের পিপি মোট ১০ বার সাক্ষী হাজির করতে সময় চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছেন, কিন্তু তাও কার্যকর হয়নি।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, “৪১ বছরের পুরোনো মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন, তবে বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।”

সমাজে খারাপ বার্তা

এভাবে একটি দুর্নীতির মামলা ৪১ বছর ধরে ঝুলে থাকলে সমাজে নেতিবাচক বার্তা যায়, এমনটি মনে করেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাইফুজ্জামান হিরো। তিনি বলেন, “অতিথি আদালতের নির্দেশনা না মানার কারণে যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহি করা উচিত।”

এই দীর্ঘস্থায়ী মামলা সমাজের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা এবং বিচারিক কার্যক্রমের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি করতে পারে, যা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারিক সিস্টেমের জন্য একটি নেতিবাচক সংকেত।

সংক্ষেপে, ৪১ বছরের পুরোনো এই মামলায় আজও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি এবং মামলার স্বাভাবিক নিষ্পত্তি নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।