মুরগির হাড় খাওয়ার উপকারিতা: স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান ও নানা সুবিধা
অনেকেই মুরগির মাংস খাওয়ার পর হাড় চিবিয়ে খেতে পছন্দ করেন। আবার কিছু মানুষ হাড়ের ভিতরের মজ্জা খাওয়ারও অভ্যস্ত। তবে এই হাড় ও মজ্জার মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
মুরগির হাড়ের সাদা অংশ বা তরুণাস্থি দুটি প্রকারের প্রোটিনে সমৃদ্ধ—গ্লাইসিন ও কোলাজেন। গ্লাইসিন আমাদের শরীরে কোলাজেন তৈরি করতে সহায়তা করে, যা ত্বক, হাড়, ও জয়েন্টের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, হাড়ের মজ্জায় আছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান যেমন—ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, সেলেনিয়াম, এবং জিঙ্ক।
হাড়ের ফ্যাট টিস্যুতেও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন রয়েছে, যেমন—ভিটামিন এ, ই, এবং কে। বিশেষ করে, মাংসের হাড়ের লাল অংশ (মজ্জা) ভিটামিন বি ১২ এর ভালো উৎস। যদিও এতে ক্যালোরির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি, তবুও এতে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন এবং ফসফরাসও রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
বাড়িতে রান্না করা দেশি মুরগির হাড়ে আরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়, যার মধ্যে কিছু প্রধান উপকারিতা হল:
১. মস্তিষ্কের কোষের স্বাস্থ্য রক্ষা
হাড়ের মজ্জায় উপস্থিত ভিটামিন বি ১২, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এটি মস্তিষ্কের কোষকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে।
২. প্রদাহ কমায়
হাড়ের মজ্জায় থাকা গ্লুকোস্যামাইন, গ্লাইসিন, এবং কনজুগেটেড লিনোলাইক অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এ উপাদানগুলো জয়েন্টের ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে।
৩. ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাঁদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন রয়েছে, তাঁদের এডিনোপেকটিনের পরিমাণ কম থাকে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে মুরগির হাড়ে এই উপাদান বিদ্যমান, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।
৪. মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি কমায়
হাড়ের মধ্যে থাকা এডিনোপেকটিন ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা সঠিক রাখে এবং শরীরের ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে এটি ডায়াবেটিক মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৫. শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে সহায়তা
হাড়ের মজ্জায় থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুদের মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে, যা তাদের বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৬. রক্ত জমাট বাঁধা
হাড়ে উপস্থিত ভিটামিন কে দেহের কোথাও ক্ষত হলে দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে সুসংগঠিত রাখে।
৭. ত্বক, হাড় ও জয়েন্টের সুস্থতা
হাড়ের মজ্জায় থাকা ভিটামিন এ, বি ১২, আয়রন, থায়ামিন এবং ফসফরাস ত্বক, হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। এ উপাদানগুলি শরীরের বিভিন্ন অংশকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখে।
সুতরাং, মুরগির হাড় ও মজ্জা খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। তবে, খেয়াল রাখতে হবে, যাতে অতিরিক্ত ক্যালোরি বা চর্বি গ্রহণের ঝুঁকি না বাড়ে। স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে হাড়ের এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ অংশগুলো যুক্ত করলে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা পাওয়া যায়।