চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শঙ্খ নদে অবৈধ বালু উত্তোলন: ভাঙনের কবলে এলাকাবাসী
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের রাতাখোর্দ গ্রামের বাসিন্দা আলী আহমদ, শঙ্খ নদীর ভাঙনের কারণে জীবনে চারবার নিজের বসতভিটা হারিয়েছেন। তবে, এখনো তাঁর মধ্যে বসতভিটা হারানোর ভয় রয়েছে। বিশেষ করে, নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে শঙ্খ নদী বর্তমানে আরো তীব্রভাবে ভাঙছে, যার ফলে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
আলী আহমদ বলেন, ‘‘শঙ্খ নদী আমার জীবনে চারবার বসতভিটা ভেঙে নিয়ে গেছে। এখনও ভয়ে আছি, কখন আবার ভিটা ভেঙে যাবে। নদী থেকে বালু তোলার ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে এবং প্রবল জোয়ারের পাশাপাশি এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের কারণে ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে।’’
ভাঙনের ঝুঁকিতে তিনটি ইউনিয়ন
বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া, খানখানাবাদ ও সাধনপুর ইউনিয়নে শঙ্খ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে ভাঙনের ঝুঁকি বেড়েছে। প্রশাসনের মাঝেমাঝে অভিযান পরিচালনার পরেও, বালু তোলার কাজ বন্ধ হচ্ছে না, ফলে নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া থেকে শুরু করে খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া পর্যন্ত এলাকাটি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার প্রধান স্থান হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাতে বালু উত্তোলন আরো বৃদ্ধি পায়, ফলে এসব এলাকাতে নদীর ভাঙন আরও দ্রুতগতিতে ঘটছে।
প্রশাসনের অভিযানও বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন অভিযান চালালেও, পরবর্তীতে বিরতি দিয়ে আবারও বালু তোলা শুরু হয়ে যায়। এর ফলে নদীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রশাসনের অভিযান এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
গত মঙ্গলবার, উপজেলা প্রশাসন পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী তিনজনকে আটক করেছে। অভিযানে, ড্রেজার জব্দ করার পাশাপাশি বালু তোলার দায়ে তিন ব্যক্তিকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জসিম উদ্দিন জানান, ‘‘নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাব। যেখানে যেখানে বালু তোলার অভিযোগ থাকবে, সেখানে অভিযান করা হবে।’’
স্থানীয়দের দাবি
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন যে, প্রশাসন এককালীন অভিযান পরিচালনা করলেও, স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য নিয়মিত অভিযান প্রয়োজন। খানখানাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব লোকমান হাকিম বলেন, ‘‘অভিযানের পর কিছু সময় বালু তোলা বন্ধ থাকলেও, অতীতে আমাদের ইউনিয়নে চারটি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হত। ভাঙন থেকে পুরো ইউনিয়নকে রক্ষা করতে নিয়মিত অভিযান চালানো অত্যন্ত জরুরি।’’
পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনও একই মত প্রকাশ করে বলেন, ‘‘বালু উত্তোলনের কারণে তেচ্ছিপাড়া এলাকায় ভাঙন বেড়ে গিয়েছে এবং এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যদি বালু তোলা বন্ধ করা যায়, তবে এই এলাকাটি রক্ষা পাবে। তাই নিয়মিত অভিযান চালানো প্রয়োজন।’’
উপসংহার
বাঁশখালী উপজেলার শঙ্খ নদে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে, যা নদী ভাঙনকে তীব্রতর করছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলছে। প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও, এই অবৈধ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় জনগণও এই কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন, যাতে নদীর ভাঙন রোধ করা যায় এবং তাদের বসতভিটা রক্ষা করা সম্ভব হয়।