ইউরোপে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি
ইউরোপের মুসলিম সম্প্রদায় বর্তমানে বর্ণবাদের একটি উদ্বেগজনক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থার মতে, এই বর্ণবাদের পেছনে রয়েছে অমানবিক মুসলিমবিদ্বেষী কথাবার্তা।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপের ১৩টি দেশের ৯ হাজার ৬০০ জন মুসলিমের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই জানান, তারা সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। ইইউ এজেন্সি ফর ফান্ডামেন্টাল রাইটস (এফআরএ) নামের এই সংস্থাটি ৭ অক্টোবরের আগে জরিপটি সম্পন্ন করে। ওই দিন গাজায় হামাসের রকেট হামলার পর থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষের ঘটনা বাড়ছে।
এফআরএ-এর পরিচালক শিরপা রাউতিয়ো বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কারণে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও বৈষম্য উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।” জরিপে অংশগ্রহণকারী মুসলিমরা জানান, তাদের সন্তানেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্ত্যক্ত হয়, চাকরির ক্ষেত্রে অসমতার শিকার হন, এমনকি বাড়ি ভাড়া নিতে গেলেও পক্ষপাতের সম্মুখীন হন।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা চাপের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে, ৭ অক্টোবরের পর মুসলিম ও কিছু ইহুদি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, জার্মানির বার্লিনে একটি সিনাগগে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা এবং ফ্রান্সে মুসলিম কাউন্সিল এবং মসজিদকে হুমকির চিঠি পাঠানোর ঘটনা।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ২০২২ সালের আগে পাঁচ বছরে ৪৭ শতাংশ মুসলিম বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা জানান। এই সংখ্যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। বিশেষ করে তরুণ মুসলিমদের মধ্যে বৈষম্যের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ইউরোপে জন্মগ্রহণকারী মুসলিমদের ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা চাকরি পেতে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
এফআরএ সেক্রেটারি ভিডা বেরেসনেভিসিউটে বলেন, “মুসলিমদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ইউরোপে একজন মুসলিম হিসেবে বসবাস করা আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।” তিনি আরও জানান, ধর্মীয় পোশাক পরিধানকারী মুসলিম নারীরাও চাকরিতে বেশি বৈষম্যের শিকার হন।
মানবাধিকার সংস্থা এফআরএ ইউরোপীয় সরকারগুলোকে বৈষম্য ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছাড়া বর্ণবাদ এবং বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়।