কর্ণফুলী টানেল: অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে উঠেছে
প্রায় ১০,৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কর্ণফুলী টানেল এখন বড় একটি অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ সময় এই টানেল ফাঁকা থাকে, যেখানে যানবাহনের চাপ নেই। নির্মাণের আগে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল যে দৈনিক ২০,০০০ গাড়ি চলবে, কিন্তু বর্তমানে গড়ে মাত্র ৪,৫০০ গাড়ি চলছে।
দিনে আয় হচ্ছে প্রায় ১২ লাখ টাকা, অথচ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ হচ্ছে ৩৭.৫ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি চীনের ঋণ পরিশোধের চাপও রয়েছে। গত অর্থবছর থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বার্ষিক।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, “টানেলের উপযোগী সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। পরিবহন ব্যবস্থা না করে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে।” তিনি জানান, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মিত হলে সেখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে, যা টানেলের ব্যবহার বাড়াতে সাহায্য করবে।
এছাড়া, পদ্মা রেল প্রকল্প এবং মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পেও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পদ্মা রেল প্রকল্পে ৩৯,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও লাভের আশা কম। মাতারবাড়ী ৫১,০০০ কোটি টাকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও আশানুরূপ নয়; নির্ভরযোগ্য কয়লা সরবরাহ ছাড়া এটি কার্যকরী হতে পারছে না।
দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ১৫,৪৭৬ কোটি টাকার বিনিয়োগের পরেও যাত্রীসংখ্যা আশানুরূপ নয়। প্রকল্পটি রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন অপ্রতুল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান বলেন, “প্রকল্পগুলোতে সঠিক ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়নি, ফলে এই বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিতে কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।”
সার্বিকভাবে, এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে এবং সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাব অর্থনীতিতে নতুন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।