“হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ: অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছার সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত”

রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রেফারেন্স পাঠান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং শপথ গ্রহণ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে রিট করেন এক আইনজীবী। শুনানি শেষে বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। সম্প্রতি, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশিত হয়েছে।

এই আদেশে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আইনি দলিল দ্বারা সমর্থিত নয়, তবে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে উপদেষ্টামূলক মতামত গ্রহণ করেছেন এবং তা জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। হাইকোর্টের আদেশে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবে।

রিটটি ভ্রান্ত, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক হিসেবে চিহ্নিত করে সরাসরি খারিজ করা হয়েছে।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি যদি কোনো আইনি প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন, যা জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং যেটির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহলে তিনি সেই প্রশ্ন আপিল বিভাগের কাছে পাঠাতে পারেন। আপিল বিভাগ, যথাযথ শুনানি শেষে রাষ্ট্রপতিকে তার মতামত প্রদান করতে পারেন।

গত ডিসেম্বরে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ রিটটি দাখিল করেন। রিট আবেদনকারীর দাবি ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি সংবিধানে নেই, তাই রেফারেন্স চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম মেনে শুনানি করতে হবে, তবে শুনানির জন্য নোটিশ দেওয়া হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য ছিল, রেফারেন্সের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছেন।

২০১৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর পর, রাষ্ট্রপতি ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেন এবং ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, যেখানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।

এর আগে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের পর, ৮ আগস্ট আপিল বিভাগের মতামত প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণের জন্য জরুরি প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের নিয়োগ করতে পারবেন এবং তাদের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।