“ঢাকার রাস্তায় ধুলোর কারণে বাড়ছে শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যা”

মিরপুরের ধুলাবালু ও তার স্বাস্থ্যঝুঁকি

রাজধানী ঢাকা শহরের মিরপুরের ৬০ ফুট সড়ক এলাকার বাসিন্দা মো. আফসার হোসেনের বাসা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশেই রাস্তাটি রয়েছে। কিছুক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেই তাঁকে অস্বস্তি অনুভব করতে হয়—কারণ অতিরিক্ত ধুলাবালু। এই সমস্যা সারা বছরই থাকে, তবে শীতকালে এর তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়।

এ পরিস্থিতি শুধু আফসারের জন্যই নয়, তাঁর পরিবারের সদস্যরাও এই সমস্যা থেকে মুক্ত নন। বিশেষ করে তাঁর সাত বছরের সন্তানের কাশি-হাঁচি লেগেই থাকে, যা শীতকালে আরও বেশি বেড়ে যায়। আফসার জানান, ‘ঘরে আলো-বাতাস ঢোকা প্রয়োজন হলেও জানালা খোলার মতো পরিস্থিতি নেই। রাতের পর পরই ধুলা জমে যায়, আর বাসার আসবাবপত্র প্রতিদিন মুছতে হয়।’

মিরপুরের ৬০ ফুট সড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে গর্ত তৈরি হয়েছে, আর সেখানে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এর ফলে রাস্তায় চলাচলকারী মানুষদের সারা সময় ধুলায় ঢেকে যেতে হয়, যা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

আফসার আরও বলেন, “এই সড়কে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলে কেউ যদি গোসল বা পোশাক পরিবর্তন না করে, সে ভালো অনুভব করবে না।” অন্য এক বাসিন্দাও জানান, খোলা যানবাহনে চলাচলের সময় ধুলাবালুতে ভোগে এবং যাদের অ্যাজমা বা অ্যালার্জি রয়েছে, তারা সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সড়কের ধুলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করলেও, পরবর্তীতে তা আবার সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সমস্যা সমাধানের বদলে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরের অন্যান্য স্থানেও এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে ২ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, পাঁচ বছরের নিচে শিশুরা বায়ুদূষণের কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছে, যেমন কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ, হাঁপানি, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি।

ঢাকার ধানমন্ডির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দেখা যায়, ১ বছর বয়সী এক শিশুর সর্দি-কাশির সমস্যা, যা বায়ুদূষণের কারণে হচ্ছে বলে তার বাবা মনে করেন। একই সেন্টারে আরও অনেক শিশুর শ্বাসকষ্ট এবং ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা গেছে। শিশু অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন বলেন, “শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তিনটি বিষয় জরুরি—বায়ুদূষণ কমানো, মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, এবং প্যাকেটজাত খাবার পরিহার করা।”

শীতকালে, শিশুরা বিশেষভাবে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। অধ্যাপক রুহুল আমিন আরও বলেন, শিশুদের সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা হয়, যা বায়ুদূষণের কারণে আরও বাড়ে।

ঢাকার বাইরের সাভারের নগরকোন্ডা গ্রামের পরিস্থিতিও একই রকম। এখানকার শিশুরা ধুলাবালুর কারণে সর্দি-কাশিতে ভুগছে। মুন্নি বেগম নামের এক মা জানান, তাঁর ১০ মাস বয়সী শিশুর শুকনা কাশি হচ্ছে এবং তা সম্ভবত এখানকার ধুলাবালু এবং যানবাহনের কারনে।

ঢাকার শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এই সময়ে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ুদূষণের কারণে এসব রোগের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিসেম্বরে ঢাকা শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর কারণে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।

এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে, তাদের ধুলাবালু থেকে দূরে রাখা এবং বায়ুদূষণ কমাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।