বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে টঙ্গী হয়ে বিশ্ব ইজতেমা শেষ করে ফেরার পথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ট্রেনে হামলার শিকার হয়েছেন রেজাউল ইসলাম নামে এক তরুণ। তাঁর দাবি, টুপি ও দাড়ি থাকার কারণে তাঁকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমের কাছে এ অভিযোগ করেছেন। গতকাল, বুধবার, রেজাউল ইসলামকে নিয়ে সমাজকর্মীদের একটি দল শিয়ালদহ স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
রেজাউলের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়।
অভিযোগে বলা হয়, গত মঙ্গলবার সকালে রেজাউল ইসলাম, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা শেষে গেদে-শিয়ালদহ লোকাল ট্রেনে করে বাংলাদেশ থেকে ফিরছিলেন। তিনি তাঁর মালপত্র ট্রেনের বাংকারে ও চেয়ারের নিচে রেখেছিলেন। প্রথমদিকে ট্রেন ছিল ফাঁকা, তবে পরে নিয়মিত যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে শুরু করেন। কিছু যাত্রী কোনো কারণ ছাড়াই সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক মন্তব্য করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে তাঁরা অশালীন ভাষায় কথা বলতে থাকেন। রেজাউল প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর করা হয়।
রেজাউল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, “অশালীন ভাষায় সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের পর, কিছু যাত্রী আমাকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে। তাঁরা বলছিলেন, ‘আমরা ভারতের জনসংখ্যা বাড়াচ্ছি।’ আমি তাঁদের জানাই, আমি ভারতীয়, এবং আমাদের সবার একই অধিকার রয়েছে। এই কথার পরেই তারা আমাকে মারধর শুরু করে।”
এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া—মার্ক্সবাদী (সিপিআইএম) এই হামলার প্রতিবাদ করেছে।
ভারতে সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় আক্রমণের ঘটনা নতুন নয়। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন অঞ্চলে বাঙালি মুসলমানরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, এবং এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।
গত আগস্টে হুগলি জেলার এক বাসিন্দা মুহাম্মদ রবিউল হককেও একই ধরনের হামলার শিকার হতে হয়। তিনি যখন একটি ট্রেকারে (জিপ) সফর করছিলেন, তখন হামলা হয়। পুলিশ দীর্ঘ সময় কিছু না নেওয়ায় রবিউল হক পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু কমিশনের কাছে গিয়ে বিষয়টি সামনে আনেন। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর এমন হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।