যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরপরই চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন, এবং এর পাল্টা জবাবে বেইজিংও নানা পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। এর ফলে বিশ্বের দুই সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়েছে।
বেইজিং, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তারা কিছু নতুন পদক্ষেপও গ্রহণ করবে, যা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর, যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপগুলো নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্যিক বিরোধের ফলস্বরূপ, ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে শুল্ক আরোপ এবং পাল্টা শুল্কের হুমকি দেওয়া হয়।
এবার চীন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), এবং অপরিশোধিত তেল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ। শুল্কের হার হবে ১০ শতাংশ এলএনজির জন্য এবং ১৫ শতাংশ অপরিশোধিত তেলের জন্য। যদিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে কয়লা রপ্তানি তুলনামূলক কম, চীন এলএনজি আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করেছে, এবং ২০১৮ সালের পর আমদানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
তবে অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্রের তেল রপ্তানির পরিমাণ খুব কম, যা চীনের জন্য খুব বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। চীন শুধু ১.৭ শতাংশ তেল আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২৩ সালে, তাই এখানে যুক্তরাষ্ট্রের উপর প্রভাব সীমিত থাকবে।
এছাড়া, চীন কৃষি যন্ত্রপাতি, পিকআপ ট্রাক এবং বড় গাড়ির ওপরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীন সাধারণত ইউরোপ ও জাপান থেকে পিকআপ ট্রাক আমদানি করে, তবে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চীন এই পদক্ষেপ নিতে পারে।
চীনের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য চীনের শুল্কের আওতায় আসবে, যা চীন থেকে আমদানির প্রায় ১২ শতাংশ। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তু চীন থেকে আমদানি করা সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য।
গুগলের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে চীন, যদিও এর বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ২০১৮ সাল থেকে গুগলের সেবা চীনে নিষিদ্ধ, তবে কিছু সীমিত সেবা এখনও চলছে, যেমন গেমস ও অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ। কিন্তু চীনে গুগলের ব্যবসা খুব ছোট, তাই সেখানে কিছু পদক্ষেপ নিলেও এর প্রভাব সীমিত থাকবে।
এছাড়া, চীন মার্কিন প্রতিষ্ঠান পিভিএইচকে “অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান” হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এতে ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগারের মতো ব্র্যান্ডগুলো চীনে ব্যবসা চালাতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।
অন্যদিকে, চীন বিরল ধাতু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে, বিশেষ করে কিছু ধাতু, যা মহাকাশ ও সামরিক শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে না বলে মনে হচ্ছে, কারণ চীন যেসব বিরল ধাতু রপ্তানি করছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।
ট্রাম্প সরকারের উদ্দেশ্য একাধিক বিরল ধাতু সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করা, যাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা পাওয়া যাবে।