“ট্রাম্প–মাস্ক: ‘ইউএসএআইডি বন্ধ করা আমাদের শত্রুদের জন্য উপহার”

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিত, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের পদক্ষেপে অশান্তি

ক্ষমতায় আসার পরপরই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির (USAID) সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএআইডিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করতে চায়, যা তাদের উন্নয়ন কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। গত সোমবার, ওয়াশিংটনে ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়ের কর্মীদের অফিসে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউএসএআইডির মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কয়েক হাজার কোটি ডলার সহায়তা দিয়ে থাকে। সংস্থাটির সহায়তা স্থগিতের এই পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইনপ্রণেতাদের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে। তারা একে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছে, পাশাপাশি বলেছে যে এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের দরিদ্র জনগণের জন্য ক্ষতিকর হবে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপদে ফেলবে, এবং বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমিয়ে দেবে।

ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টা, টেক দিগ्गজ ইলন মাস্ক, দীর্ঘদিন ধরেই ইউএসএআইডির কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “কট্টর বামপন্থী উন্মাদেরা ইউএসএআইডি পরিচালনা করে, তারা ব্যাপক জালিয়াতি করেও পার পেয়ে গেছে,” তবে তিনি ঠিক কারা “উন্মাদ” তা বিস্তারিত জানাননি।

ইউএসএআইডি: একটি ইতিহাস এবং প্রতিবাদ

ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ১৯৬১ সালে, এবং সংস্থাটি বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে কাজ করছে। গত বছর, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তার মোট পরিমাণ ছিল ৬৮ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ইউএসএআইডির জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

তবে, ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিতের এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা একে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করছেন। মেরিল্যান্ডের সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন বলেন, “এটি শুধু আমাদের শত্রুদের জন্য একটি উপহার নয়, এটি পুরোপুরি অবৈধ।”

ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ করার ফলস্বরূপ সিরিয়া, ইরাক, এবং অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে যে মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে তা নিয়ে অনেক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ইউএসএআইডি সহায়তা বন্ধ হওয়ার কারণে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) বন্দীদের রাখা কারাগারের কর্মীরা চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।

ইলন মাস্কের সংশ্লিষ্টতা এবং পরিণতি

ইলন মাস্ক, যিনি বর্তমানে মার্কিন সরকারের ব্যয় সংকোচনের দায়িত্বে আছেন, তাঁর মন্তব্যগুলো আরও তাপ বাড়িয়েছে। মাস্ক সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউএসএআইডিকে ‘জালিয়াতি ও দুর্নীতির আখড়া’ বলে আক্রমণ করেছেন। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, “ইউএসএআইডি সংস্কারের বাইরে চলে গেছে…আমরা এটিকে বন্ধ করতে যাচ্ছি।”

এই অবস্থায়, মার্কো রুবিও, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউএসএআইডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি এও বলেন, সংস্থার কার্যক্রম চলমান থাকবে, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তবে কীভাবে এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন করা হবে, তা স্পষ্ট নয়।

সংশোধন এবং বিশৃঙ্খলা

ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটও বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং সহায়তার তথ্যাদি এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশের দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত ইউএসএআইডির সহায়তাগুলির তথ্যও অনুপস্থিত হয়ে গেছে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এবং মানবিক সংকট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলো এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।

গত কয়েক দিনে, ইউএসএআইডির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তা চাকরি ছেড়েছেন। সংবাদে বলা হয়েছে, মাস্কের বিভাগের সঙ্গে বিরোধের কারণে ইউএসএআইডির শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে, এসব পদক্ষেপ ইউএসএআইডির কার্যক্রমে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে।

এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্য মনে করেন যে, ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ করার পেছনে ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকতে পারে, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে। কানেটিকাটের সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছিলেন, “আজকের পদক্ষেপের পর চীন উল্লাস করছে, কারণ মাস্ক চীনের সঙ্গে শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা করেন।”

উপসংহার

ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এক বড় ধরণের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তবে, এর ফলে যেসব মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে, এবং এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভবিষ্যত কী হবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোচনা চলছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।