বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেছেন, যদি এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) গ্র্যাজুয়েশন পিরিয়ড তিন বছর পেছানো না হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধস নামবে। শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটানোর পথে, এবং এ লক্ষ্যে রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা কমানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বিসিআই সভাপতি বলেন, গত এক বছরে দেশের ১০০টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরও ২০০টি বন্ধ হওয়ার পথে। অন্যদিকে, সরকার ‘টিকফা’ বাস্তবায়ন করে আমেরিকার জিএসপি সুবিধা পেতে চেষ্টা করছে, কিন্তু তিনি উল্লেখ করেন, আমেরিকা জিএসপি দিলেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল সেক্টর কখনও ডিউটি ফ্রি সুবিধা পাবে না। তিনি আরও বলেন, যদি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছানো না যায়, তবে দেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব পড়বে।
তিনি জানান, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল সেক্টর, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত এবং ৪০% কর্মসংস্থান ও ৮৫% রপ্তানি অবদান রাখে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি উদাহরণ দেন যে, ২০২৭ সালে ভিয়েতনাম ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিরো ট্যারিফ সুবিধা পাবে, কিন্তু বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরকে ইউরোপীয় বাজারে ১২% শুল্ক পরিশোধ করতে হবে, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।
তদুপরি, তিনি সরকারের চলমান অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করে বলেন, “আইএমএফের প্রেসক্রিপশন মেনে চললে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, ব্যবসায়ীদের জন্য পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে এবং তাঁদের মনে প্রশ্ন উঠছে—যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু না করলে, দেশের অর্থনীতি কোথায় দাঁড়াবে?
বিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীরা বর্তমানে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “সরকার যদি ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতির দিকে মনোযোগ না দেয়, তবে ভবিষ্যতের সরকার তা সামলাতে পারবে না।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো না করে, তাহলে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বজায় রাখা, উৎপাদন খরচ সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।”