জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সবাইকে গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী একদলীয় সংবিধান’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “এই সংবিধান থেকে বের হয়ে আমাদের বহুদলীয় সংবিধান রচনার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “বিচার ও সংস্কারের পথে কেউ যদি বাধা সৃষ্টি করতে চায় বা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করে, সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা রক্ত দিয়েছি, আরও দেব—বাংলাদেশের যাত্রা অব্যাহত থাকবে ইনশা আল্লাহ।”
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মার্চ ফর ইউনিটি অ্যান্ড জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব কথা বলেন। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বর্বরোচিত গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রসংস্কার ও নাগরিক অধিকারের দাবিতে’ এই কর্মসূচি আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রজ্ঞা, তাদের লড়াই এবং ত্যাগকে সম্মান করি। কিন্তু, যদি তারা দেশকে আবার ধ্বংস করতে চান, আমাদের অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে চান, তাহলে আমাদের একটি বহুদলীয় সংবিধান দরকার।” তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘মুজিববাদী একদলীয় সংবিধান’ থেকে বের হয়ে বহুদলীয় সংবিধান রচনার দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান।
বাহাত্তরের সংবিধান দিয়ে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, “আমাদের বহুদলীয় সংবিধান লাগবে, এবং গণপরিষদে সংবিধান রচনার যে সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “যারা আমাদের পথে বাধা তৈরি করতে চাইবে, তাদের শেখ হাসিনার পরিণতির দিকে লক্ষ রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা রক্ত দিয়েছি, আরও দেব, বাংলাদেশের যাত্রা অব্যাহত থাকবে ইনশা আল্লাহ।”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সবাইকে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেন এবং আরও যোগ করেন, “আগামীর বাংলাদেশের সংকট সমাধানে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এমন একটি সংবিধান চাই, যে সংবিধানে আমাদের আর কোন রাষ্ট্রের কাছে গোলামির জিঞ্জির পরিধান করতে হবে না, এবং কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তি আর বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।”
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম বলেন, “জুলাই বিপ্লবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শেখ হাসিনার মসনদ কেঁপে উঠেছিল। এখন বলা হচ্ছে ছাত্ররা আন্দোলন থেকে ফিরে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এক দফা আন্দোলন শুরু করেছিলাম, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার পতন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ। শেখ হাসিনার পতন কিছুটা হলেও হয়েছে, তবে চূড়ান্ত বিজয় এখনো অর্জিত হয়নি। যতদিন না নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েম হয়, ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে।”
এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। তারা জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্ত্বেও যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন।