ধর্মনিরপেক্ষ না হলে একটি রাষ্ট্র কীভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে—এই প্রশ্নটি তুলে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মন্তব্য করেছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হচ্ছে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ—এমন কোনো বিষয়েই পক্ষপাতি্ব না করা। রাষ্ট্র যদি এই অবস্থান না নেয়, তবে তা স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য তৈরি করে।
তিনি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে এই বিষয়টি তুলে ধরেন। ‘সর্বজনকথা’ নামক জার্নালের সম্পাদক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে এই শব্দটি অন্তর্ভুক্ত ছিল, তবে বাস্তবে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও সরকারগুলো অনেক সময় তা পরিপালন করেনি।” বর্তমান সরকারের মধ্য “অন্তর্ভুক্তিমূলক” শব্দটি ব্যবহৃত হলেও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকলে কীভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া সম্ভব?
তিনি আরও বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সকল জনগণের সমান অধিকার এবং সুযোগ প্রদান করা। যদি রাষ্ট্র ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব করে, তবে তা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র হতে পারে না।
আনু মুহাম্মদ ভারতে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় মুসলমানদের জন্য নিরাপত্তার একটি বড় কারণ। তিনি বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিলে, সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হবে, যা মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।”
গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রকাশিত দেয়ালচিত্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ সে আকাঙ্ক্ষাগুলোর থেকে অনেক পিছিয়ে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বৈষম্য প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি, সহিংসতা এবং ধর্মের নামে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে সমস্ত ধর্মের মানুষ অংশ নিয়েছিল, কিন্তু এখন কিছু পক্ষ অসহিষ্ণুতা ও নিপীড়ন সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের বৈষম্য প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে ধনীদের একটি ছোট শ্রেণি অত্যন্ত সম্পদশালী, যাদের সম্পত্তি লুণ্ঠিত হচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। সরকার বলছে, অর্থের অভাবে জনগণের ওপর ভ্যাট চাপানো হয়েছে, তবে বৈষম্য বৃদ্ধির মূল কারণ একটি সামগ্রিক নীতিকাঠামো।
আনু মুহাম্মদ রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা এবং সমাজের সকল শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত।
বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য দায়ী, এবং তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি সতর্ক করেন যে, যদি বর্তমান সরকার আবারও এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল হয়, তবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের ন্য কোনও উন্নতি হবে না।