কলকাতার আলোচিত আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় একমাত্র দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সঞ্জয়ের ফাঁসি না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন অনেক আন্োলনকারী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার সমর্থনে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে ফাঁসিবিরোধী কিছু সমাজকর্মী এই রায়ে খুশি হয়েছেন, তাদের মতে মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাহার একটি সঠিক পদক্ষেপ।
আজ সোমবার কলকাতার শিয়ালদহ জেলা দায়রা আদালত এই শাস্তি ঘোষণা করেছে। আদালত আগেই শনিবার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। আজ দুপুর পৌনে ৩টার দিকে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় শোনা যায়, প্রায় পাঁচ মাস ১১ দিন পর।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায় ঘোষণার পর বলেন, “আমরা ফাঁসির দাবি করেছিলাম। আমাদের হাতে এই মামলা থাকলে অনেক আগেই ফাঁসির আদেশ হতো।” তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়ে তিনি নিজেও ফাঁসির দাবিতে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, আন্দোলনে যুক্ত অনেকেই অভিযোগ করছেন যে, সিবিআই তদন্তে কিছু গফিলতি থাকায় আসামির ফাঁসি হতে পারেনি।
উত্তর কলকাতার বরানগর এলাকার স্কুল শিক্ষিকা নিবেদিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পরিষ্কার নয় কেন সঞ্জয় রায়কে ফাঁসি দেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে আরও বিশ্লেষণ দরকার। আসলেই তদন্তে কোন ত্রুটি ছিল কি না, বিশেষ করে যখন সিবিআইও ফাঁসির দাবি করেছিল।”
নদীয়ার চিকিৎসক মানব মল্লিক বলছেন, “আমরা সঠিক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করেছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব কিছু বৃথা। আমাদের যে চিকিৎসক বোন প্রাণ দিয়েছিলেন, তিনি সুবিচার পেলেন না।”
সিবিআইয়ের তরফ থেকে সঞ্জয় রায়কে ধর্ষণ ও হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, এবং তারা রায়ে ফাঁসির দাবি জানিয়েছিল। তাদের যুক্তিতে, সঞ্জয় রায় এককভাবে এই অপরাধে জড়িত ছিলেন। তবে আদালত এই অপরাধকে বিরলতম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত া করে সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন।
ফাঁসিবিরোধী মানবাধিকারকর্মী সুজয় রাহা বলেন, “ফাঁসি দেওয়ার আগে, সংশ্লিষ্ট মামলা খুব ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ, তা নিশ্চিত প্রমাণিত হয়নি, তাই তার ফাঁসি দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।” তিনি আরও যোগ করেন, অতীতে এমন কিছু মামলা ছিল যেখানে পুলিশি তদন্তের ত্রুটি ছিল এবং নিরপরাধ বযক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, যেমন ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে।
এদিকে, মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, সঠিক তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আর কোনও নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি না পায়।